Monday, 26 September 2016

পরহেজগারীর সংজ্ঞা ও গুরুত্ব


পরহেজগারীর সংজ্ঞা ও গুরুত্ব সম্পর্কে তরিকতের ইমাম হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী(রাঃ) ছাহেব যা বলেনঃ
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে মুত্তাকী বা পরহেজগার ব্যক্তিগণের সম্পর্কে খোশ খবর দিয়াছেন। তিনি কখনও বলিয়াছেন যে, তাহারা মুক্তিপ্রাপ্ত।কখনও বলিয়াছেন, সাফল্যের অধিকারী তাহারাই। বাস্তবিকই, দুনিয়া এবং আখেরাতের সমুদয় ইজ্জত ও কল্যাণের অধিকারী মুত্তাকী বা পরহেজগার ব্যক্তিগণই। সুতরাং তাকওয়া বা পরহেজগারীর সঠিক সংজ্ঞা জানা আমাদের কর্তব্য।
হযরত মুজাদ্দেদ আলফে-ছানী (রাহঃ) বলেনঃ
....... অতএব পরকালে মুক্তিলাভ হওয়া দুইটি কাজের উপর নির্ভর করে।
প্রথমতঃ আল্লাহ্তায়ালা যে আদেশ করিয়াছেন তাহা পালন করা।
দ্বিতীয়তঃ তিনি যাহা নিষেধ করিয়াছেন, উহা হইতে বিরত থাকা।
উক্ত দুইটির মধ্যে দ্বিতীয়টিই প্রধান। আর এই দ্বিতীয়টির নামই তাক্ওয়া বা পরহেজগারী।
একদা হযরত নবী করীম (ছঃ) এর পাক দরবারের কোন এক ব্যক্তিকে এবাদতে কঠোর সাধনাকারী এবং অপর একজনকে পরহেজগার বলিয়া উল্লেখ করা হইল। তাহা শুনিয়া হযরত নবী করীম (ছঃ) উপস্থিত লোকদের বলিলেন, তোমরা পরহেজগারীর সহিত অন্য কিছুরই তুলনা করিও না। জানিয়া রাখ, পরহেজগারী তোমাদের ধর্মের মূল এবং পরহেজগারীর কারণেই মানুষ ফেরেস্তা হইতে শ্রেষ্ঠতর মর্যাদার অধিকারী। (মকতুব নং ৭৬, প্রথম খন্ড)

Saturday, 10 September 2016


আসরের ওয়াক্ত শুরু। সবাইকে নামাজ পড়তে হবে। অজুর জন্য পানির প্রয়োজন। কিন্তু পানি পাওয়া যাচ্ছে না।নবীজীর(সাঃ) সামনে একটি পাত্রে সামান্য একটু পানি যা দিয়ে একজনের অজুও হয় না। সাহাবীদের সংখ্যা অনেক। নবীজী(সাঃ) তাঁর সামনে রাখা পাত্রের পানিতে তদীয় পবিত্র হস্ত মুবারক রাখলেন।আর ততক্ষনাৎ তাঁর আংগুলের ফাক দিয়ে পানি উথলে উঠা শুরু করল। নবীজী(সাঃ) সবাইকে দ্রুত অজু সেরে নিতে বললেন। সবাই অজু করলেন। শেষে নবীজীও করলেন। হাদীসের বর্ণনায়----
একঃ
আবদুল্লাহ ইব্‌ন ইউসুফ (রঃ).....আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখলাম, তখন আসরের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল। আর লোকজন উযূর পানি তালাশ করতে লাগল কিন্তু পেল না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পাত্রে তাঁর হাত রাখলেন এবং লোকজনকে তা থেকে উযূ করতে বললেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সে সময় আমি দেখলাম, তাঁর আঙ্গুলের নীচ থেকে পানি উথলে উঠছে। এমনকি তাদের শেষ ব্যক্তি পর‌্যন্ত তা দিয়ে উযূ করল। (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড, ১৭০ নং হাদিস, ইফা)
দুইঃ
‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুনীর (রঃ)..... আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার সালাতের সময় উপস্থিত হলে যাঁদের বাঢ়ী নিকটে ছিল তাঁরা (উযূ করার জন্য) বাড়ী চলে গেলেন। আর কিছু লোক রয়ে গেলেন (তাঁদের কোন উযূর ব্যাবস্থা ছিল না)। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য পাথরের পাত্রে পানি আনা হল। পাত্রটি এত ছোট ছিল যে, তার মধ্যে তাঁর উভয় হাত মেলে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তা থেকেই কওমের সকল লোক উযূ করলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলামঃ ‘আপনারা কতজন ছিলেন’? তিনি বললেনঃ ‘আশিজন বা আরো বেশী। (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড, ১৯৫ নং হাদিস, ইফা)

হযরত আবু বকর (রাঃ) অসুস্থ ???


মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) অসুস্থ আবু বকর (রাঃ)-কে দেখতে গেলেন। তখন তিনি সেখান থেকে বের হয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ)-র কাছে তাশরীফ নিলেন। উদ্দেশ্য, তাঁকে তাঁর পিতার অসুস্থতার সংবাদ দেওয়া। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঘরে প্রবেশ করা মাত্র হযরত আবু বকর (রাঃ) দরজার বাইরে থেকে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, আব্বাজান দেখি তাশরীফ নিয়ে এসেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) খবই আশ্চর্য প্রকাশ করতে লাগলেন যে, আল্লাহ্ পাক এত দ্রুত তাকে আরোগ্য দান করেছেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) আরয করলেন, হুজুর! আপনি বের হওয়া মাত্রই হযরত জিব্রাইল (আঃ) আগমন করলেন এবং আমাকে একটি ঔষুধ শুঁকালেন, আর সাথে সাথে আমি সুস্থ হয়ে উঠলাম।
ইবনে আবুদ্দিনার ও ইবনে আসাকিরও এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
[তথ্যসূত্রঃ মাকামে সাহাবা ও কারামতে সাহাবা]

Thursday, 8 September 2016

স্বপ্ন তিন প্রকার


আমরা ঘুমালে অনেক কিছু স্বপ্নে দেখি। কখনওবা আনন্দদায়ক স্বপ্ন, কখনওবা কষ্টদায়ক স্বপ্ন, আবার কখনওবা ভীতিকর স্বপ্ন দেখি। কিন্তু স্বপ্নের অর্থ আমরা বুঝি না। কোন্ স্বপ্ন দেখলে কি করতে হবে তাও আমরা জানি না। এ সম্পকে আমাদের প্রিয় নবীজী(সাঃ) যে দিক-নিদেশনা দিয়েছেন তা নীচে তুলে ধরা হলো।

আবু বাকর ইব্‌ন আবু শায়বা (রঃ).…আবু হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ স্বপ্ন তিন প্রকার।
(১) আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ,
(২)মনের খেয়াল, আর
(৩) শয়তানের পক্ষ থেকে ভীতি প্রদর্শন।
কাজেই তোমাদের কেউ কোন পসন্দনীয় জিনিস স্বপ্নে দেখলে তা ইচ্ছা করলে অন্যের কাছে বলতে পারে। আর কেউ কোন অপসন্দীয় জিনিস স্বপ্নে দেখলে তা কারো কাছে বলবে না, আর সে যেন উঠে সালাত আদায় করে। (সুনানে ইবনে মাজাহ্, হাদিস নং-৩৯০৬, ই,ফা)

স্বপ্ন তিন প্রকার
অন্য এক বণনায়ঃ
হিশাম ইব্‌ন আম্মার (রঃ)…আওফ ইব্‌ন মালিক (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ স্বপ্ন তিন প্রকারঃ
(এক) শয়তানের পক্ষ থেকে ভীতিজনক স্বপ্ন যা বনী আদমকে চিন্তাগ্রস্ত করে।
(দুই) মানুষ জাগ্রত অবস্থায় যা দেখলে চিন্তাযুক্ত হয়, স্বপ্নে তা দেখা।
(তিন) স্বপ্ন হলো নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
রাবী বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ আপনি কি এ হাদীস রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হাঁ, আমি তা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে শুনেছি।(সুনানে ইবনে মাজাহ্, হাদিস নং-৩৯০৭, ই,ফা)
কেউ অপসন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে-
মুহাম্মদ ইব্‌ন রুম্হ আল-মিসরী (রঃ)….জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ অপসন্দনীয় স্বপ্ন দেখে তখন সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে, তিনবার আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে পানাহ চায়(‘‘আউযূ বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম” পড়ে)এবং সে যে পাশে কাৎ হয়ে শুয়ে ছিল তা যেন পরিবর্তন করে নেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ্, হাদিস নং-৩৯০৮, ই,ফা)