পয়গম্বরগনের পরিপর্ণ অনুসরণ, অনুগম্ন ও
তোফায়েকের মাধ্যমে মারেফাতের শেষের শেষ মাকামে পৌঁছাইয়া কিছু কিছু উম্মতেরা
তাকওয়ার হাকীকী গুন অর্জন করিয়াছেন; তাহারাও পয়গম্বরগণের মতই সর্ব্দাই খোদাভিতিতে
উদ্বেলিত থাকিতেন। যেমন;হযরত আবু বকর (রাঃ) ছাহেব- যিনি খোদার ভয়ে সর্বদাই ভীত
থাকিতেন।মাঝে মাঝেই বলিতেন, “হায়!আমি যদি কোন বৃক্ষ হইতাম,তবে কতইনা ভালো
হইত।আমাকে হিসাব নিকাশের দায়ে পরিতে হইতনা।”
হজরত উমর (রাঃ)ছাহেব পবিত্র কোরান শরীফের
কোন আয়াত শ্রবণ করিলে মূর্চিত হইয়া পড়িতেন এবং কোন কোন সময় তাহার মুর্ছা এমন
গুরুতর হইত যে,কয়েকদিন পর্যন্ত শয্যাশয়ী হইয়া থাকতেন।লোকজন তাহাকে দেখিতে
আসিত।আল্লাহতায়ালার ভয়ে তিনি এত অধিক ক্রন্দন করিতেন যে,অবিরাম ধারায় অশ্রু
প্রবাহিত হওয়ার কারণে তাহার গন্ডদ্বয়ের উপর দুইতি কৃষবর্ণ রেখা পড়িয়া গিয়েছিল।তিনি
প্রাই বলিতেন, “হায়!কতই ভাল হইত,যদি উমর মাতৃগর্ভ হইতে ভুমিষ্ট না হইত।”একদা তিনি
উটে আরোহন পুর্বক কোথাও যাইতেছিলেন,পথিপার্শ্বস্থ কোন এক গৃহে এক ব্যক্তি কুরআন
শরীফ তেলাওয়াত করতেছিলেন।তিনি যখন সেই পথ অতিক্রম করতে ছিলেন, ঠিক সেই সময় পাঠক
তেলেওয়াত করিলেন,অর্থাৎ-‘নিশ্চই তমার প্রভুর আযাব ঘটিবেই ঘটিবে।’(সুরা তুরঃ৭)আয়াতটি
শ্রবন মাত্রই হযরত উমর (রাঃ) এর দেলে
ভিষণ ভয় সঞ্চারিত হইল।ভয়ে অবসন্ন হইয়া পড়িবার উপক্রম হইলে তিনি উষ্ট্র হইতী নামিয়া নিকটস্ত একতি দেওয়ালের গায়ে
হেলান দিয়া বসিলেন।শক্তি লোপ পাইয়া যাওয়ায় লোকজন আসিয়া তাহাকে ধরাধরি করিয়া গৃহে
লইয়া গেল।এই ঘটনায় একমাস যাবৎ তিনি পিড়িত চ্ছিলেন।অথচ পীড়ান কারণ কেহই বুঝিতে পারে
নাই।
উচ্চস্তরের
ওলী আল্লাহ সকল তাকওয়ার হাকিকী গুন সমৃদ্ধ
ছিলেন। উচ্চতম পর্যায়ের তাকওয়া বা খোদাআভোতি বা পরহেজগারীর গুন তাহারা অর্জন করিতে
পারিয়াছিলেন। তাই শেষ নিঃশ্বাসের চিন্তায় তাহারা সদাআ চিন্তিত থাকিতেন। যদি শেষ
নিঃশ্বাস আল্লাহর ইয়াদের সহিত বাহির না হয়-তাহা হইলে সারা জীবনে ইবাদতই যে পন্ড
হইবে; এই ভয়র তাহারা সারা জীবন ক্রন্দন করিতেন। তাকওয়ার হাকীকী গুণে গুনান্বিত
সাধকবর্গ অধিক চিন্তাযুক্ত হওয়ার আরও এক কারণ এই যে, তাহারা জানেনঃ খোদাতায়ালা
“খায়রুল মাকেরীন” অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ রহস্যময়। তাহার ক্ষমতার যেমন পারাপার নাই,
তেমনি তাহার রহস্যেরও শেষ নাই।