Monday, 5 December 2016

গীবত ও পরনিন্দা ?/?


‘গীবত’ এর শাব্দিক অর্থ পরনিন্দা, অসাক্ষাতে অন্যের দোষত্রুটি বর্ণনা করা। ইসলামী পরিভাষায় গীবত বলা হয় কাহারও অসাক্ষাতে তাহার দোষত্রুটি (যাহা সাক্ষাতে বলিলে সে ব্যথিত হইত) বর্ণনা করা (কথা, লেখনী, বা ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমে) যদিও সেই সকল দোষত্রুটি তাহার মধ্যে থাকে। আর যদি সে দোষ তাহার মধ্যে না থাকে তাহা হইলে উহাকে অপবাদ বলা হয়। উলামায়ে কিরাম বিভিন্নভাবে গীবতের যে সংজ্ঞা বর্ণনা করিয়াছেন তাহার মর্ম ইহাই। হাদীসেও এই কথাই বলা হইয়াছেঃ
আবু হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত। একদা রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলিলেনঃ গীবত কি তোমরা কি তাহা জান? তাঁহারা(সাহাবীগণ) বলিলেনঃ আল্লাহ্‌ ও তাঁহার রাসূলই ভাল জানেন। তিনি বলিলেনঃ তোমার ভাই সম্পর্কে এমন আলোচনা করা যাহা সে অপসন্দ করে। বলা হইলঃ আপনি এই ব্যাপারে কি মনে করেন যে, আমি যাহা বলিতেছি তাহা যদি আমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে? তিনি বলিলেনঃ তুমি যাহা বলিতেছ তাহা যদি তোমার ভাইয়ের মধ্যে থাকে তাহা হইলেই তুমি তাহার গীবত করিলে। আর যদি উহা তাহার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তাহাকে অপবাদ দিলে।
তথ্যসূত্রঃ
১। মুসলিম শরীফ, হাদীস নং ৬৩৫৭ ইফা,
২। আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৪৭৯৮ ইফা
গীবতের সংজ্ঞায় ইমাম গাজ্জালী(রঃ) বলেন, গীবত বলা হয় অপরের এমন আলোচনা করা-যা সে শুনলে খারাপ মনে করে। এ আলোচনা অন্যের দৈহিক ত্রুটি, বংশগত ত্রুটি, চারিত্রিক ত্রুটি বা দোষ আলোচনা করা, ধর্ম, কর্ম, পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ী, গাড়ী-ঘোড়ার দোষ সম্পর্কিত হলেও গীবত।( তথ্যসূত্রঃ ইহইয়া উলুমুদ্দিন)
কুরআন পাক ও হাদীস শরীফে গীবতকে খুবই ঘৃণিত কাজ বলিয়া উল্লেখ করিয়া উহা হইতে বিরত থাকিবার জন্য কঠোরভাবে নির্দেশ দেওয়া হইয়াছে। কুরআন কারীমে বলা হইয়াছে- “এবং একে অপরের পশ্চাতে নিন্দা করিও না। তোমাদিগের মধ্যে কি কেহ তাহার মৃত ভ্রাতার গোশত ভক্ষণ করিতে চাহিবে? বস্তুত তোমরা তো ইহাকে ঘৃণ্যই মনে কর”। (সূরা ৪৯ হুজুরাতঃ১২)
হাদীছ শরীফে উল্লিখিত হইয়াছেঃ আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) হইতে বর্ণিত। রাসূলূল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ মিরাজ রজনীতে আমাকে যখন আকাশে লইয়া যাওয়া হয় তখন (সেখানে) আমি একদল লোকের নিকট দিয়া গমন করিলাম। তাহাদের নখগুলি ছিল আগুনের। উহা দিয়া তাহারা তাহাদের মুখমন্ডল এবং পেট ক্ষত বিক্ষত করিতেছিল। আমি বলিলামঃ ইহারা কাহারা হে জিবরাঈল? জিব্‌রাঈল বলিলেনঃ ইহারা সেই সকল লোক যাহারা মানুষের গোশত ভক্ষণ (গীবত) করিত এবং তাহাদের সম্মান বিনষ্ট করিত।(আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৪৮০১ ইফা)
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, একদিন নবী করীম (সাঃ) রোযার আদেশ দিয়ে বললেন, আমি যে পর্যন্ত অনুমতি না দেই কেউ ইফতার করবে না। সাহাবায়ে কিরাম রোজা রাখলেন। সন্ধ্যা হলে এক একজন এসে ইফতারের অনুমতি নিতে লাগল। এক ব্যক্তি আরজ করল, হে আল্লাহর নবী! দুজন মহিলাও রোযা রেখেছিল, আপনি অনুমতি দিলে তারাও ইফতার করত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এভাবে সে পুনরায় একই কথা বললো এবং রাসূলও (সাঃ) মুখ ফিরিয়ে নিলেন। এভাবে সে তৃতীয় বার নিবেদন করার পর তিনি বললেন, তারা রোযা রাখেনি। যারা সারাদিন মানুষের গোশত ভক্ষণ করে, তাদের আবার কিসের রোযা? তুমি গিয়ে তাদেরকে বল, তোমরা রোযা রেখে থাকলে বমি কর, সে মহিলাদ্বয়কে এ নির্দেশ শুনিয়ে দিল। তারা বমি করলে প্রত্যেকের মুখ দিয়ে জমাট রক্ত নির্গত হল। লোকটি এসে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট ঘটনা বর্ণনা করলে তিনি বললেন, আল্লাহর কসম যার কব্জায় আমার প্রাণ, যদি এ জমাট মাংসপিন্ড তাদের পেটে থেকে যেত তবে তাদেরকে জাহান্নাম খেয়ে নিত। (তথ্যসূত্রঃ এহইয়া উলুমুদ্দীন)
আবূ বারযাঃ আল-আসলামী (রাঃ) হইতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ হে ঐ সকল লোক, যাহারা মুখে ঈমান আনিয়াছ অথচ অন্তরে ঈমান প্রবেশ করে নাই। তোমরা মুসলমানদের গীবত করিও না এবং তাহাদের দোষ অণ্বেষণ করিও না। কারণ যে তাহাদের দোষ অন্বেষণ করিবে আল্লাহ তাহাদের দোষ অন্বেষন করিবেন। আর আল্লাহ যাহার দোষ অন্বেষণ করিবেন তাহাকে অপদস্থ করিয়া ছাড়িবেন।(আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৪৮০২ ইফা)।
হযরত আয়েশা (রাঃ) হইতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলিলামঃ সাফিয়্যার এই রকম এই রকম অর্থাত খাটো হওয়া আপনার জন্য যথেষ্ট। তখন তিনি বলিলেনঃ তুমি এমন একটি কথা বলিয়াছ যদি তাহা সমুদ্রে ফেলা (সহিত মিশানো) হইত তবে অবশ্যই সমুদ্র পরিপূর্ণ হইয়া যাইত। আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি তাঁহাকে একজন লোকের কথা শুনাইলাম। তিনি বলিলেনঃ আমি ইহা পছন্দ করিনা যে, আমি কোনও লোকের কথা বর্ণনা করিব আর আমার জন্য এইরূপ এইরুপ হইবে। (আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৪৭৯৯ ইফা)।
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হইতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেনঃ এক মুসলিমের উপর অন্য মুসলিমের সম্পদ, সম্মান এবং জান হারাম করা হইয়াছে। কোনও লোকের দুস্কর্ম করার জন্য ইহাই যথেষ্ট যে, সে তাহার মুসলিম ভাইকে হেয় প্রতিপন্ন করিবে (আবূ দাউদ শরীফ, হাদীস নং ৪৮০৪ ইফা)।
হযরত জাবির ও আবু সায়ীদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেন, “ গীবত করা থেকে তোমরা বেচেঁ থাক। কেননা, গীবত যেনার চেয়েও নিকৃষ্টতম।” অর্থাতঃ- যেনা করে মানুষ তওবা করলে আল্লাহ পাক তওবা কবুল করে নেন কিন্তু গীবতকারীকে মাফ করা হয় না যতক্ষণ যার গীবত করা হয় সে মাফ না করে।”
তথ্যসূত্রঃ
ক) মেরকাত শরহে মেশকাত, গীবত অধ্যায়
খ) জামেউস সাগীর, গীবত অধ্যায়
গ) কানযুল উম্মাল
বিশ্বওলী, খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী(কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেব মোহাছাবার অধ্যায়ে অধিক কথা বলার ক্ষতির আলোচনা করতে গিয়ে গীবত সম্পর্কে বলেন,
অধিক কথা বলায় বহুবিদ অপরাধ সংঘটিত হওয়ার সম্ভাবনা বিদ্যমান। অধিক কথা বলার কুফল নিম্নরুপঃ-
(ক) যাহারা অধিক কথা বলে, ইচ্ছায় হউক, অনিচ্ছায় হউক, তাহার পরনিন্দা, পরচর্চা বা গীবত করিয়া থাকে।
(খ) মিথ্যা কথা বলে।
(গ) ওয়াদা ভংগ করে, কারণ ওয়াদা দেওয়ার সময় চিন্তাভাবনা না করিয়াই ওয়াদা দেয়। পরে আর রক্ষা করিতে পারে না।
(ঘ) অতিরিক্ত কথা বলার কারণে আসল কথাকে অতিরঞ্জিত করে।
(ঙ) বেহুদা কথায় লিপ্ত থাকে।
(চ) হাস্য-কৌতুকে সময় কাটায়। ফলে যিনি অধিক কথা বলেন, তাহার দেল মারা যায়। হযরত শেখ সাদী (রঃ) বলেন, “তোমার কথা আদন এর মুক্তার চেয়েও যদি মূল্যবান হয়, তথাপিও তুমি যদি বেশী কথা বল, তবে তোমার দেল মারা যাইবে। দেল অন্ধকার অচ্ছন্ন হইবে।”
অধিক কথা বলায় যে পাপ মানুষ সবচেয়ে বেশী করে তাহা হইল গীবত অর্থাত পরনিন্দা বা পরর্চচা এবং মিথ্যা কথা বলা। এইদুটোই ইসলামী দৃষ্টিকোনে জঘন্য অপরাধ বলিয়া পরিগণিত। গীবত কি? কোন ব্যক্তির অসাক্ষাতে তাহার দোষ-ত্রুটির আলোচনা করাকে গীবত বলে। রাসূলে পাক (সাঃ) বলেন, “গীবত যেনা হইতেও কঠিনতম গোনাহ।” ছাহাবাগণ আরজ করিলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সাঃ)! গীবত যেনা হইতেও কঠিনতর? তিনি বলিলেন “কোন ব্যক্তি যেনা করিয়া তওবা করিলে আল্লাহতায়ালা তাহার তওবা কবুল করেন এবং তাহাকে মাফ করিয়া দেন, কিন্তু গীবতকারীর জন্য তওবার কোন বিধান নাই, যে পর্যন্ত না যাহার গীবত করা হইয়াছে, সে মাফ করে।”
(তথ্যসূত্রঃ নসিহত-সকল খন্ড একত্রে, পৃষ্টা নং ৮২, নসিহত নং-৬)
কাজেই বুঝা গেল গীবত এক জঘন্য পাপ। আত্মার এক ঘৃণ্য ব্যাধি। আল্লাহপাক আমাদের দয়া করুন যেন এই জঘন্য পাপ থেকে আমরা নিজেদের হেফাযত করতে পারি। আমিন।
----আকতার হোসেন কাবুল

Friday, 18 November 2016

কুরআন ও হাদইসের আলোকে আল্লাহ্‌র ওলীর পরিচয়???


ওলী’ শব্দটি আরবী বিলায়াত / ওয়ালায়াত শব্দ থেকে গৃহীত। শব্দটির অর্থ নৈকট্য, বন্ধুত্ব বা অভিভাবকত্ব। বিলায়াত অর্জনকারীকে ‘ওলী’ /‘ওয়ালী’ বলা হয়। অর্থাৎ নিকটবর্তী, বন্ধু, সাহায্যকারী বা অভিভাবক। ইসলামী পরিভাষায় ‘বিলায়াত’ ‘ওলী’ ও ‘মাওলা’ শব্দের বিভিন্ন প্রকারের ব্যবহার রয়েছে। উত্তরাধিকার আইনের পরিভাষায় ও রাজনৈতিক পরিভাষায় এ সকল শব্দ বিশেষ অর্থে ব্যবহৃত। তবে বেলায়েত বা ওলী শব্দের সর্বাধিক ব্যবহৃত হয় ‘আল্লাহর বন্ধুত্ব’ ও ‘আল্লাহর বন্ধু’ অর্থে।
পাক কুরআনের আলোকে আল্লাহর ওলীঃ
পাক কুরআনে মহান আল্লাহ বলেনঃ
“জেনে রাখ! নিশ্চয় আল্লাহ্‌র ওলীগণের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হবে না- যারা ঈমান এনেছে এবং যারা আল্লাহর অসন্তুষ্টি থেকে আত্মরক্ষা করে চলে বা তাকওয়া অবলম্বন করে।”(সূরা ইউনূসঃ ৬২-৬৩)
উল্লিখিত আয়াতপাকে দুটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যথাঃ
১। যারা ঈমান এনেছে।
২। যারা তাকওয়া বা খোদাভীতি অর্জন করে যাবতীয় পাপ থেকে নিজেকে বিরত রেখেছে।
এদু’টি গুণ যারা অর্জন করল তাদের কোন ভয় নেই, তারা দুঃখিতও হবে না। তারাই আল্লাহর ওলী বা বন্ধু।
হাদীসের আলোকে আল্লাহর ওলীঃ
রাসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ) বলেছেন যে, ফরয ইবাদতগুলো পালনের সাথে সাথে অনবরত নফল পালনের মাধ্যমে বান্দা বেলায়েত বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ বলেছেনঃ “যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলীর সাথে শত্রুতা করে আমি তার সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করি। আমার নৈকট্য অর্জন বা ওলী হওয়ার জন্য বান্দা যত কাজ করে তন্মধ্যে আমি সবচেয়ে বেশি ভালবাসি যে কাজ আমি ফরয করেছি।(ফরয পালনই আমার নৈকট্য অর্জনের জন্য সবচেয়ে প্রিয় কাজ)। এবং বান্দা যখন সর্বদা নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে আমার বেলায়েতের পথে বা আমার সান্নিধ্যের পথে অগ্রসর হতে থাকে তখন আমি তাকে ভালবাসি। আর যখন আমি তাকে ভালবাসি তখন আমি তার শ্রবণযন্ত্রে পরিণত হই, যা দিয়ে সে শুনতে পায়, আমি তার দর্শনেন্দ্রিয় হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখতে পায়, আমি তার হাত হয়ে যাই যদ্দ্বারা সে ধরে এবং আমি তার পা হয়ে যাই, যদ্দ্বারা সে হাঁটে। সে যদি আমার কাছে কিছু প্রার্থনা করে তাহলে আমি অবশই তাকে তা প্রদান করি। সে যদি আমার কাছে আশ্রয় চায় তাহলে আমি অবশ্যই তাকে আশ্রয় প্রদান করি।”(সহীহ বোখারী শরীফ, হাদীস নং ৬০৫৮ ইফা)
বর্ণিত হাদীসে বেশ কয়েকটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয়। যথাঃ
যারা আল্লাহর ওলী
১। তারা ফরয ইবাদত নিখুত ভাবে পালন করেন।
২। বেশী বেশী নফল বন্দেগী করেন।
৩। বন্দেগী করতে করতে তারা আল্লাহর ভালবাসা লাভ করেন।
৪। তখন তারা এমন এক অবস্থা লাভ করেন যে তাদের হাত, পা, চোখ, কান তথা সর্বাংগ আল্লাহ নিজের বলে ঘোষণা দেন। একেই তরিকতের পরিভাষায় ফানাফিল্লাহ বলে। অর্থাত আল্লাহর অস্তিত্বে বিলীন হওয়া বলে।
যেমনঃ পাক কালামে আল্লাহতায়ালা নবীজীকে(সাঃ) উদ্দেশ্য করে বলেন,
ক) ‘যারা আপনার হাতে হাত রেখে বায়াত হয়, তারাতো আল্লাহরই হাতেই বায়াত হয়। তাদের হাতের উপর রয়েছে আল্লাহর হাত।’(সূরা ৪৮ ফাতহঃ ১০)
খ) ‘আপনি যে ধুলির মুষ্টি নিক্ষেপ করেছিলেন তা আপনি করেননি, বরং তা করেছিলেন আল্লাহ স্ময়ং।’ (সূরা ৮ আনফালঃ ১৭)
কাজেই বুঝা গেল, আল্লাহর রাসূল(সাঃ) আল্লাহর অস্তিত্বে লীন ছিলেন বিধায় আল্লাহপাক তার হাতকে নিজের হাত বলে উল্লেখ করেছেন।
৫। তখন তারা আল্লাহর নিকট এমন এক ‌মযাদা বা সম্মান লাভ করেন যে, তাদের সাথে কেউ কোনরকম শত্রুতা করলে আল্লাহ তা বরদাস্ত বা সহ্য করেন না।
৬। তাদের প্রার্থনাসমূহ আল্লাহ অবশ্যই কবুল করেন।
৭। আল্লাহতায়ালা নিজে তাদের অশ্রয়স্থল হন।
উল্লিখিত গুণসমূহ দয়াল নবীজী(সাঃ) এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী পরিলক্ষিত হয়। তাই নবীজী(সাঃ)-ই আল্লাহর সবচেয়ে বড় বন্ধু বা ওলী। তারপর যারা নবী-করিম(সাঃ) এর পরিপূর্ণ অনুসরনের মাধ্যমে উল্লিখিত গুণসমূহ অর্জন করতে পারেন তারাও আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে ধন্য হন। আল্লাহর ওলী বা বন্ধু হিসাবে পরিগণিত হন।
বর্তমান জামানায় আল্লাহর সর্বাধিক নৈকট্যপ্রাপ্ত সূফীসাধক হলেন বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত ফরিদপুরী(কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেব। দুনিয়াব্যপী যার কোটি কোটি মুরীদান তারই বাতেনী প্রতিপালনে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য বা সান্নিধ্যের পথে অগ্রসর হচ্ছে।
আল্লাহর ওলীর পরিচয় দিতে গিয়ে তিনি বলেন, আল্লাহর ওলীগণ হলেন জ্বলন্ত লৌহসদৃশ। এক খন্ড লৌহ যেইরুপ আগুনে পুড়িয়া আগুনের রং ধারন করে, সেইরুপ আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহতায়ালার নূরের তাজাল্লীতে জ্বলিয়া আল্লাহর গুণে গুনান্বিত হন।
------কাবুল

Saturday, 15 October 2016

আমাদের ইসলাম : পীর-মুরীদ কাকে বলে?

আমাদের ইসলাম : পীর-মুরীদ কাকে বলে?: ‘পীর’ শব্দটি ফরাসী শব্দ, যার বাংলা অর্থ হল ‘বৃদ্ধ বা মুরব্বী’। পরিভাষায় বলা হয়, যিনি শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত তথা জাহেরী ও বাত...

পীর-মুরীদ কাকে বলে?


‘পীর’ শব্দটি ফরাসী শব্দ, যার বাংলা অর্থ হল ‘বৃদ্ধ বা মুরব্বী’। পরিভাষায় বলা হয়, যিনি শরিয়ত, তরিকত, হাকিকত ও মারেফত তথা জাহেরী ও বাতেনী জ্ঞানে জ্ঞানী-তাকেই কামেল পীর বা ওলী বলে। পবিত্র কোরআনে এরকম লোককে ‘মুর্শেদ ও হাদী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মুরশীদ শব্দের অর্থ হল পথপ্রদর্শক। যিনি আল্লাহর আদেশ নিষেধ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে পালন করার প্রশিক্ষণ দেন তার নাম মুরশীদ বা পথপ্রদর্শক। যাকে ফার্সীতে বলে পীর।
“মুরীদ” শব্দটিও আরবী। যার অর্থ হল ইচ্ছাপোষণকারী। যে ব্যক্তি আল্লাহর আদেশ নিষেধ আল্লাহ তাআলা যেভাবে চান সেভাবে পালন করার ইচ্ছা পোষণ করে কোন বুযুর্গ ব্যক্তির হাত ধরে শপথ করে, সে ব্যক্তির নাম হল “মুরীদ”। এ ব্যাখ্যা থেকে একথা স্পষ্ট হল যে, পীর হবেন শরীয়তের আদেশ নিষেধ পালন করার প্রশিক্ষণদাতা। আর যিনি সে প্রশিক্ষণ নিতে চায় সে শিক্ষার্থীর নাম হল “মুরীদ”।
সুতরাং যে ব্যক্তি নিজেই শরীয়তের বিধান মানে না, নামায পড়ে না, পর্দা করে না, সতর ঢেকে রাখে না বা শরীয়তের আবশ্যকীয় কোন বিধান পালন করে না, সে ব্যক্তি কিছুতেই পীর তথা মুর্শীদ হতে পারে না। কারণ তার নিজের মাঝেই যখন শরীয়ত নেই, সে কিভাবে অন্যকে শরীয়তের উপর আমল করা প্রশিক্ষণ দিবে? নিজেইতো প্রশিক্ষিত নয়।
আর পীর মুরীদির এ পদ্ধতি রাসূল (সাঃ) থেকে চলে আসছে। রাসূল (সাঃ) সাহাবাদের আল্লাহমুখী হওয়ার প্রশিক্ষণ দিতেন। সাহাবারা রাসূল (সাঃ) এর কাছ থেকে প্রশিক্ষণ নিতেন। বলা যায় রাসূল (সাঃ) হলেন সবচে’ প্রথম ও বড় পীর, ও সাহাবায়ে কিরাম হলেন প্রথম মুরীদ।

Thursday, 13 October 2016

বিশ্বওলী খাজাবাবা হযরত ফবিদপুরী(কুঃছেঃআঃ) ছাহেবর ১টি কারামতঃ



আশির দশকের কথা।ঢাকা ইউনিভাসিটির টিচার অধ্যাপক ডঃ সামাদ সাহেব সবেমাত্র ৪/৫ বার বিশ্ব জাকের মঞ্জিল পাক দরবার শরীফে এসেছেন।নিজ পরিচয় গোপন রেখেই দরবার শরীফে আসা-যাওয়া করছেন।প্রথম যেদিন এসেছিলেন হুজুরকেবলা সেদিন যে অমায়িক ব্যবহার করেছিলেন তা ভুলবার নয়।সেই থেকে এক আকষন পয়দা হয়েছে। মাঝে মাঝেই তাই দরবারে আসেন হুজুরকে দেখার জন্য। তখনও তিনি মুরীদ হন নি।
এক বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকা থেকে দরবার শরীফে আসলেন। সেদিন অনেক মুরীদান-আশেকান দরবারে এসেছেন।অনেক ভীড়। আরও দেখলেন হুজরা শরীফের বারান্দায় অনেক তরমুজ। কোন এলাকা থেকে নজরানা এসেছে। অনেকের সাথে ডঃ সামাদ সাহেবও অপেক্ষায়। হুজুর বের হলে দেখা করবেন।মনের অস্থিরতাও দূর হবে।
কিছুক্ষণ পর হুজরা শরীফের দরজা খুলে গেল। কেবলাজান হুজুর বের হয়ে বারান্দায় অনেক তরমুজ দেখে কারা এনেছে জিজ্ঞেস করে তরমুজগুলো পাক শালায় নেওয়ার নিদেশ দিলেন। ডঃ সামাদ সাহেবও ১টি তরমুজ মাথায় তুলে রওয়ানা দিয়েছেন। এমন সময় কেবলাজান হুজুর সামাদ সাহেবকে বল্লেন, ‘বাবা, আপনি না।’ সামাদ সাহেব তরমুজ নীচে নামিয়ে হুজুর কেবলাজানের পাশে দাঁড়ালেন। হুজুর কেবলা কুরসিতে বসলেন। সাথে সাথে অনেক মুরীদান ও আগন্তক হুজুরকেবলাজানকে ঘিরে দাঁড়িয়ে গেল।
হঠাত হুজুরকেবলা সামাদ সাবের দিকে অংগুলী ইশারা করে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বল্লেন, “আপনারা কি উনাকে চিনেন? উনি মাটির নীচে কি সম্পদ লুকিয়ে আছে তা বলতে পারেন।” সামাদ সাহেবতো হতবাক। তিনি অবাক বিস্ময়ে অভিভূত। কারণ তিনিতো হুজুরকে বা দরবার শরীফের কাউকেই বলেননি যে তিনি একজন ভু-তত্ত্ববিদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন। তাহলে হুজুর কেবলা কি করে জানলেন?
বেশকিছুকাল পরে অনেক ধমীয় কিতাব অধ্যয়ন করে সামাদ সহেব বুঝতে পেরেছিলেন যে, অন্তরযামী আল্লাহতায়ালা তার বন্ধুদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকে অপরাপর মানুষের ভিতর ও বাহিরের খবরাখবরও জানিয়ে দেন।
(তথ্যসূত্রঃ ডঃ সামাদ সাহেব স্ময়ং)

Monday, 3 October 2016

৭২ জন শহিদে কারবালার নামঃ


আল্লাহ পাক শহীদে কারবালার আত্মত্যাগ এর বিনিময়ে ওনাদের উসীলায় আমাদের নাজাতের ব্যবস্থা করে দিন।- আমিন
(1) হযরত সৈয়েদেনা ইমাম হুসাঈন ইবনে আলী (কাররামাহু ওয়াজাহুল
কারিম) রাদিআল্লাহু
(2) হযরত আব্বাস বিন আলী (কাররামাহু ওয়াজাহুল কারবলা)
(3) হযরতসৈয়েদেনা আলী আকবর বিন হুসাঈন (রাদিআল্লাহু )
(4) হযরত সৈয়েদেনা আলী আসগর বিন হুসাঈন (রাদিআল্লাহু)
(5) হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল্লাহ বিন আলী (কাররামাহু ওয়াজাহুল
কারিম)
(6) হযরত সৈয়েদেনা জাফর বিন আলী( কাররামাহু ওয়াজাহুল কারিম)
(7) হযরত সৈয়েদেনা উসমান বিনআলী(কাররামাহু ওয়াজাহুল কারিম)
(8) হযরতসৈয়েদেনা আবু বকরবিন আলী(কাররামাহু ওয়াজাহুল
কারিম)
(9) হযরত সৈয়েদেনা আবু বকর বিন হাসান(রাদিআল্লাহু তায়ালা
আনহু)
(10) হযরত সৈয়েদেনা কাসিম বিন হাসান(রাদিআল্লাহুু)
(11) হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল্লাহ বিন হাসান (রাদিআল্লাহু )
(12) হযরত সৈয়েদেনা আওন বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর
(রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু)
(13) হযরত সৈয়েদেনা মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন জাফর
(রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু)
(14) হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল্লাহ বিন মুসলিম বিনআকীল(রাদিআল্
লাহু)
(15) হযরত সৈয়েদেনা মুহাম্মদ বিন মুসলিম (রাদিআল্লাহু)
(16) হযরত সৈয়েদেনা মুহাম্মদ বিন সাঈদ বিন আকীল
(রাদিআল্লাহু)
(17) হযরত সৈয়েদেনা আব্দুল রহমান বিন আকীল(রাদিআল্লাহু)
(18) হযরত সৈয়েদেনা জাফর বিন আকীল(রাদিআল্লাহু)
(19) হযরত ওনস বিন হাস` আসাদী (রাদিআল্লাহু)
(20) হযরত হাবিব বিন মাজাহির আসাদী(রাদিআল্লাহু)
(21) হযরত মুসলিম বিন আওসাজা আসাদী(রাদিআল্লাহু )
(22) হযরত কাইস বিন মাসহার আসাদী(রাদিআল্লাহু)
(23) হযরত আবু সামামা উমরু বিন আব্দুল্লাহ(রাদিআল্লাহু
(24) হযরত বুরির হামদািন(রাদিআল্লাহু
(25) হযরত হানালাবিন আসাদ( রাদিআল্লাহু)
(26) হযরত আবিস শাকরি(রাদিআল্লাহু) (27) হযরত আব্দুল রহমান
রাহবি(রাদিআল্লাহু)
(28) হযরত সাইফ বিন হাস` (রাদিআল্লাহু)
(29) হযরত আমির বিন আব্দুল্লাহ হামদানি(রাদিআল্লাহু)
(30) হযরত জুনাদা বিন হাস`(রাদিআল্লাহু)
(31) হযরত মাজমা বিন আব্দুল্লাহ(রাদিআল্লাহু)
(32) হযরত নাফে বিন হালাল (রাদিআল্লাহু)
(33) হযরত হাজ্জাজ বিন মাসরুক (রাদিআল্লাহু) মুয়াজ্জিন এ
কাফেলা
(34) হযরত ওমর বিন কারজা (রাদিআল্লাহু)
(35) হযরত আব্দুল রহমান বিন আবদে রব(রাদিআল্লাহু)
(36) হযরত জুনাদা বিন কাব(রাদিআল্লাহু)
(37) হযরত আমির বিন জানাদা(রাদিআল্লাহু)
(38) হযরত নাঈম বিন আজলান(রাদিআল্লাহু)
(39) হযরত স্বাদ বিন হাস`(রাদিআল্লাহু) (40) হযরত জুহায়ের বিন
কাইন(রাদিআল্লাহু)
(41) হযরত সালমান বিন মাজারাইব (রাদিআল্লাহু)
(42) হযরত সাঈদ বিন ওমর(রাদিআল্লাহু)
(43) হযরত আব্দুল্লাহ বিন বাসির (রাদিআল্লাহু)
(44) হযরত ইয়াজিদবিন জাঈদ কানদি(রাদিআল্লাহু)
(45) হযরত হারব বিন ওমর উল কাইস(রাদিআল্লাহু
(46) হযরত জাহির বিন আমির(রাদিআল্লাহু:)
(47) হযরত বাসির বিন আমির(রাদিআল্লাহু)
(48) হযরত আব্দুল্লাহ আরওয়াহ গাফফারি(রাদিআল্লাহু)
(49) হযরত জন (রাদিআল্লাহু)
(50) হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমির(রাদিআল্লাহু)
(51) হযরত আব্দুল আলা বিন ইয়াজিদ (রাদিআল্লাহু)
(52) হযরত সেলিম বিন আমির(রাদিআল্লাহু) আজদী
(53) হযরত কাসিম বিন হাবীব(রাদিআল্লাহু)
(54) হযরত জায়েদ বিন সেলিম (রাদিআল্লাহু)
(55) হযরত নোমান বিন ওমর (রাদিআল্লাহু) আবদী
(56) হযরত ইয়াজিদ বিন সাবিত (রাদিআল্লাহু)
(57) হযরত আমির বিন মুসলিম (রাদিআল্লাহু)
(58) হযরত সাইফ বিন মালিক (রাদিআল্লাহু)
(59) হযরত জাবির বিন হাজ্জজি(রাদিআল্লাহু)
(60) হযরত মাসুদ বিন হাজ্জজি (রাদিআল্লাহু)
(61)হযরত আব্দুল রহমান বিন মাসুদ(রাদিআল্লাহু)
(62) হযরত বাকের বিন হাই
(63) হযরত আম্মার বিন হাসান তাই(রাদিআল্লাহু)
(64) হযরত জুরঘামা বিন মালিক (রাদিআল্লাহু)
(65)হযরত কানানা বিনআতিক(রাদিআল্লাহু)
(66) হযরত আকাবা বিন স্লাট (রাদিআল্লাহু)
(67)হযরত হুর বিন ইয়াজিদ তামিমি (রাদিআল্লাহু)
(68) হযরত আকাবা বিন স্লট (রাদিআল্লাহু)
(69) হযরত হাবালা বিন আলী শিবানী (রাদিআল্লাহু)
(70) হযরত কানাবা বিন ওমর(রাদিআল্লাহুতায়াল আনহু)
(71) হযরত আব্দুল্লাহ বিন ইয়াকতার (রাদিআল্লাহু তায়ালা
আনহু)
(72) হযরত গোলাম এ তুরকি (রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু)

Monday, 26 September 2016

পরহেজগারীর সংজ্ঞা ও গুরুত্ব


পরহেজগারীর সংজ্ঞা ও গুরুত্ব সম্পর্কে তরিকতের ইমাম হযরত মুজাদ্দেদ আলফেছানী(রাঃ) ছাহেব যা বলেনঃ
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে মুত্তাকী বা পরহেজগার ব্যক্তিগণের সম্পর্কে খোশ খবর দিয়াছেন। তিনি কখনও বলিয়াছেন যে, তাহারা মুক্তিপ্রাপ্ত।কখনও বলিয়াছেন, সাফল্যের অধিকারী তাহারাই। বাস্তবিকই, দুনিয়া এবং আখেরাতের সমুদয় ইজ্জত ও কল্যাণের অধিকারী মুত্তাকী বা পরহেজগার ব্যক্তিগণই। সুতরাং তাকওয়া বা পরহেজগারীর সঠিক সংজ্ঞা জানা আমাদের কর্তব্য।
হযরত মুজাদ্দেদ আলফে-ছানী (রাহঃ) বলেনঃ
....... অতএব পরকালে মুক্তিলাভ হওয়া দুইটি কাজের উপর নির্ভর করে।
প্রথমতঃ আল্লাহ্তায়ালা যে আদেশ করিয়াছেন তাহা পালন করা।
দ্বিতীয়তঃ তিনি যাহা নিষেধ করিয়াছেন, উহা হইতে বিরত থাকা।
উক্ত দুইটির মধ্যে দ্বিতীয়টিই প্রধান। আর এই দ্বিতীয়টির নামই তাক্ওয়া বা পরহেজগারী।
একদা হযরত নবী করীম (ছঃ) এর পাক দরবারের কোন এক ব্যক্তিকে এবাদতে কঠোর সাধনাকারী এবং অপর একজনকে পরহেজগার বলিয়া উল্লেখ করা হইল। তাহা শুনিয়া হযরত নবী করীম (ছঃ) উপস্থিত লোকদের বলিলেন, তোমরা পরহেজগারীর সহিত অন্য কিছুরই তুলনা করিও না। জানিয়া রাখ, পরহেজগারী তোমাদের ধর্মের মূল এবং পরহেজগারীর কারণেই মানুষ ফেরেস্তা হইতে শ্রেষ্ঠতর মর্যাদার অধিকারী। (মকতুব নং ৭৬, প্রথম খন্ড)

Saturday, 10 September 2016


আসরের ওয়াক্ত শুরু। সবাইকে নামাজ পড়তে হবে। অজুর জন্য পানির প্রয়োজন। কিন্তু পানি পাওয়া যাচ্ছে না।নবীজীর(সাঃ) সামনে একটি পাত্রে সামান্য একটু পানি যা দিয়ে একজনের অজুও হয় না। সাহাবীদের সংখ্যা অনেক। নবীজী(সাঃ) তাঁর সামনে রাখা পাত্রের পানিতে তদীয় পবিত্র হস্ত মুবারক রাখলেন।আর ততক্ষনাৎ তাঁর আংগুলের ফাক দিয়ে পানি উথলে উঠা শুরু করল। নবীজী(সাঃ) সবাইকে দ্রুত অজু সেরে নিতে বললেন। সবাই অজু করলেন। শেষে নবীজীও করলেন। হাদীসের বর্ণনায়----
একঃ
আবদুল্লাহ ইব্‌ন ইউসুফ (রঃ).....আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখলাম, তখন আসরের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল। আর লোকজন উযূর পানি তালাশ করতে লাগল কিন্তু পেল না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পাত্রে তাঁর হাত রাখলেন এবং লোকজনকে তা থেকে উযূ করতে বললেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সে সময় আমি দেখলাম, তাঁর আঙ্গুলের নীচ থেকে পানি উথলে উঠছে। এমনকি তাদের শেষ ব্যক্তি পর‌্যন্ত তা দিয়ে উযূ করল। (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড, ১৭০ নং হাদিস, ইফা)
দুইঃ
‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুনীর (রঃ)..... আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার সালাতের সময় উপস্থিত হলে যাঁদের বাঢ়ী নিকটে ছিল তাঁরা (উযূ করার জন্য) বাড়ী চলে গেলেন। আর কিছু লোক রয়ে গেলেন (তাঁদের কোন উযূর ব্যাবস্থা ছিল না)। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য পাথরের পাত্রে পানি আনা হল। পাত্রটি এত ছোট ছিল যে, তার মধ্যে তাঁর উভয় হাত মেলে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তা থেকেই কওমের সকল লোক উযূ করলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলামঃ ‘আপনারা কতজন ছিলেন’? তিনি বললেনঃ ‘আশিজন বা আরো বেশী। (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড, ১৯৫ নং হাদিস, ইফা)

হযরত আবু বকর (রাঃ) অসুস্থ ???


মুহাম্মদ ইবনুল মুনকাদির বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) অসুস্থ আবু বকর (রাঃ)-কে দেখতে গেলেন। তখন তিনি সেখান থেকে বের হয়ে হযরত আয়েশা (রাঃ)-র কাছে তাশরীফ নিলেন। উদ্দেশ্য, তাঁকে তাঁর পিতার অসুস্থতার সংবাদ দেওয়া। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ঘরে প্রবেশ করা মাত্র হযরত আবু বকর (রাঃ) দরজার বাইরে থেকে ভিতরে প্রবেশ করার অনুমতি চাইলেন। হযরত আয়েশা (রাঃ) বললেন, আব্বাজান দেখি তাশরীফ নিয়ে এসেছেন। তখন রাসূলুল্লাহ্ (সাঃ) খবই আশ্চর্য প্রকাশ করতে লাগলেন যে, আল্লাহ্ পাক এত দ্রুত তাকে আরোগ্য দান করেছেন। হযরত আবু বকর (রাঃ) আরয করলেন, হুজুর! আপনি বের হওয়া মাত্রই হযরত জিব্রাইল (আঃ) আগমন করলেন এবং আমাকে একটি ঔষুধ শুঁকালেন, আর সাথে সাথে আমি সুস্থ হয়ে উঠলাম।
ইবনে আবুদ্দিনার ও ইবনে আসাকিরও এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন।
[তথ্যসূত্রঃ মাকামে সাহাবা ও কারামতে সাহাবা]

Thursday, 8 September 2016

স্বপ্ন তিন প্রকার


আমরা ঘুমালে অনেক কিছু স্বপ্নে দেখি। কখনওবা আনন্দদায়ক স্বপ্ন, কখনওবা কষ্টদায়ক স্বপ্ন, আবার কখনওবা ভীতিকর স্বপ্ন দেখি। কিন্তু স্বপ্নের অর্থ আমরা বুঝি না। কোন্ স্বপ্ন দেখলে কি করতে হবে তাও আমরা জানি না। এ সম্পকে আমাদের প্রিয় নবীজী(সাঃ) যে দিক-নিদেশনা দিয়েছেন তা নীচে তুলে ধরা হলো।

আবু বাকর ইব্‌ন আবু শায়বা (রঃ).…আবু হুরায়রা (রাঃ) সূত্রে নবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেনঃ স্বপ্ন তিন প্রকার।
(১) আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ,
(২)মনের খেয়াল, আর
(৩) শয়তানের পক্ষ থেকে ভীতি প্রদর্শন।
কাজেই তোমাদের কেউ কোন পসন্দনীয় জিনিস স্বপ্নে দেখলে তা ইচ্ছা করলে অন্যের কাছে বলতে পারে। আর কেউ কোন অপসন্দীয় জিনিস স্বপ্নে দেখলে তা কারো কাছে বলবে না, আর সে যেন উঠে সালাত আদায় করে। (সুনানে ইবনে মাজাহ্, হাদিস নং-৩৯০৬, ই,ফা)

স্বপ্ন তিন প্রকার
অন্য এক বণনায়ঃ
হিশাম ইব্‌ন আম্মার (রঃ)…আওফ ইব্‌ন মালিক (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ স্বপ্ন তিন প্রকারঃ
(এক) শয়তানের পক্ষ থেকে ভীতিজনক স্বপ্ন যা বনী আদমকে চিন্তাগ্রস্ত করে।
(দুই) মানুষ জাগ্রত অবস্থায় যা দেখলে চিন্তাযুক্ত হয়, স্বপ্নে তা দেখা।
(তিন) স্বপ্ন হলো নবুওয়াতের ছেচল্লিশ ভাগের এক ভাগ।
রাবী বলেন, আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলামঃ আপনি কি এ হাদীস রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে শুনেছেন? তিনি বললেনঃ হাঁ, আমি তা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে শুনেছি।(সুনানে ইবনে মাজাহ্, হাদিস নং-৩৯০৭, ই,ফা)
কেউ অপসন্দনীয় স্বপ্ন দেখলে-
মুহাম্মদ ইব্‌ন রুম্হ আল-মিসরী (রঃ)….জাবির ইব্‌ন আবদুল্লাহ (রাঃ) সূত্রে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ যখন তোমাদের কেউ অপসন্দনীয় স্বপ্ন দেখে তখন সে যেন তার বাম দিকে তিনবার থুথু ফেলে, তিনবার আল্লাহর কাছে শয়তান থেকে পানাহ চায়(‘‘আউযূ বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম” পড়ে)এবং সে যে পাশে কাৎ হয়ে শুয়ে ছিল তা যেন পরিবর্তন করে নেয়। (সুনানে ইবনে মাজাহ্, হাদিস নং-৩৯০৮, ই,ফা)

Monday, 29 August 2016

নবীজী(সাঃ)কে মেঘের ছায়া প্রদান


চাচা আবূ তালিব বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে সিরিয়ায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলেন। সে সয়ম দাদা আবদুল মুত্তালিব গত হয়েছেন। বালক রাসূলুল্লাহ্ (সা) চাচার পরিবারভুক্ত হয়ে আছেন।
আবূ তালিব যখন রওয়ানা হবেন, চাঁদের মত সুন্দর বালক মুহাম্মদ (সা) এসে আবূ তালিবের জামার আস্তিন ধরে দাঁড়ালেন। ভাতিজার দিকে চেয়ে তিনি বললেনঃ ওকে ছাড়া আমি থাকতে পারব না, আমাকে ছাড়া সেও থাকতে পারবে না। ওকে আমার সাথে নিয়ে যেতে হবে। রাসূলুল্লাহ্ (সা) এভাবে আবূ তালিবের বাণিজ্য কাফেলার অন্তভুক্ত হলেন।
সিরিয়ার বুসরা একটি বিখ্যাত এলাকা। অন্যানা বারের মত কাফেলা এখানে যাত্রাবিরতি করল। এখানকার বিখ্যাত খৃস্টান গির্জায় বাহিরা নামক একজন সাধক পাদ্রী থাকতেন। এ বিশাল এলাকার লোকজন ধর্মজ্ঞান ও সাধনার জন্য তাঁর প্রতি খুবই শ্রদ্ধাশীল ছিল। এ গির্জায় দীর্ঘদিনের পুরানো এক আসমানী গ্রন্থ রক্ষিত ছিল। সে যুগে এটিকেই একমাত্র ঐশী জ্ঞানের আধার বলে মনে হতো।
সাধক বাহিরার বৈশিষ্ট ছিল, তিনি লোকসমক্ষে বের হতেন না। কথাবার্তাও বলতেন না। এবার মক্কায় এ কাফেলা যখন এ গির্জার অনতিদূরে যাত্রাবিরতি করল, আশ্চার্যজনকভাবে বাহিরা এ কাফেলার জন্য আপ্যায়নের প্রচুর ব্যবস্থা করলেন। প্রকৃত ব্যাপার ছিল, প্রচন্ড রোদের ভিতর দিয়ে এ কাফেলা যখন গির্জার দিকে এগিয়ে আসছিল, বাহিরা তখন অলস চোখে সেদিকে তাকিয়েছিলেন। হঠাৎ তিনি একটি অত্যাশ্চার্য দৃশ্য দেখে চমকে উঠলেন। তিনি দেখলেন, একখন্ড ঘন মেঘ কাফেলার মধ্যকার অনিন্দ্য সুন্দর এক কিশোরের উপর ছায়া বিস্তার করে সাথে সাথে আসছে। অবাক হয়ে বাহিরা গভীর মনোযোগের সাথে তা দেখতে লাগলেন।
কাফেলা যখন গির্জান কাছে একটি বড় বৃক্ষের নিচে ক্যাম্প করল, গাছের একটি শাখা ইষৎ নত হয়ে ঐ কিশোরের উপর পরিপূর্ণ ছায়া দান করে স্থির হয়ে রইল। ঐ চলন্ত মেঘ খন্ডটিও তাঁর উপর স্থির হয়ে থাকল। বাহিরা ভোজের আয়োজন করলেন। বাহিরা তাঁর সুদীর্গকালের নিয়ম ভেঙে গির্জা থেকে বের হয়ে এলেন এবং লোক পঠিয়ে কাফেলার লোকদের দাওয়াত করলেন। বলে পাঠালেন, আমি আপনারদের ছোট-বড়, আযাদ-গোলাম সকলেই এ ভোজে শামিল হওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমার এখানে খাদ্যগ্রহণ করে আপনারা আমাকে বাধিত করিবেন।
কাফেলার একজন অবাক হয়ে বললেনঃ জনাব! আপনি আজ আপনার দীর্ঘকালের অভ্যাসের ব্যতিক্রম করে অভিনব কাজ করলেন। কতবার এ পথে যাতায়াত করেছি, আপনাকে তো কখনও গির্জার বাইরে বের হতে দেখিনি বা এরুপ কারও জন্য ভোজের ব্যবস্থা করতেও দেখিনি।
বাহিরা প্রকৃত ব্যাপার এড়িয়ে গেলেন। বললেনঃ আজ যেহেতু আপনারা আমার খুব কাছাকাছি যাত্রাবিরতি করলেন, তাই আপনারা আমার মেহমান। খাদ্য তৈরি হচ্ছে, আপনারা তা গ্রহণ করবেন, এ আমার অনুরোধ। কাফেলার লোকেরা খেতে গেল। মালামাল প্রহরার প্রয়োজনে এবং অল্পবয়সী বিধায় রাসূল (সা) গাছের নিচেই রয়ে গেলেন।
বাহিরা গির্জা থেকে বের হয়ে এলেন। তীক্ষ্ণ চোখে কাছ থেকে সকলকে জরিপ করে তিনি হতাশ হলেন। বললেনঃ হে কুরায়শী মেহমানগণ! আপনারদের মাঝে কেউ কি এখানে আসতে বাকি রয়ে গেছে ? লোকেরা বললঃ আসার মত যারা সকলেই এসে গেছে। কেবল একজন বালক রয়ে গেছে। বাহিরা চমকে উঠলেন। বললেনঃ কক্ষণও না। কাউকেই দয়া করে বাকি রাখবেন না। কুরায়শের এক সরদারও তীক্ষ্ণ কন্ঠে বলে উঠলো, লাত ও উজ্জার কসম! আবদুল মুত্তালিবের পৌত্র কাফেলার আছে অথচ আমাদের সাথে ভোজে শরীক হবে না এ কখনও হতে পারে না। এটা আমাদের সকলের জন্য বড় নিন্দনীয় ব্যাপার। এ সরদার নিজেই উঠে গিয়ে রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে কোলে করে নিয়ে এলো এবং খাদ্যের সামনে বসিয়ে দিল।
এবার কাছ থেকে বাহিরা তাঁকে গভীরভাবে নিরীক্ষণের সুযোগ পেলেন। পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থগুলো সম্পর্কে তার অসাধারণ ইলেম ছিল। সেগুলোর মাঝে শেষ রাসূল সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী ও বিশেষ বিশেষ লক্ষণসমূহের বিস্তারিত বর্ণনা বিদ্যমান ছিল। বাহিরার অন্তরে সব কিছু স্পট হয়ে গেল। খুশিতে আত্মহারা হলেন তিনি।
সকলে খেয়েদেয়ে চলে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ্ (সা)-এর কাছে এসে তিনি বসলেন। গম্ভীর স্বরে বললেনঃ “বালক! আমি তোমাকে লাত ও উজ্জার কসম দিয়ে বলছি- আমার কিছু প্রশ্নের তুমি জবাব দেবে।” বাহিরা জনৈক কুরায়শীকে ইতিপূর্বে লাত ও উজ্জার কসম দিতে শুনেছিলেন, তাই এরুপ বললেন। কিশোর রাসূলুল্লাহ্ (সা) বাধা দিয়ে বললেনঃ আমাকে এ লাত ও উজ্জার কসম দিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আল্লাহর কসম, এ দেবতাদের আমি সবচেয়ে ঘৃণা করি। বাহিরা বললেনঃ বেশ তো আল্লাহর কসম বলছি। রাসূল (সা) বললেন ঃ ঠিক আছে, কি জানতে চান বলুন। বাহিরা তাঁকে অনেক কথা জিজ্ঞেস করলেন। খাওয়া-দাওয়া ও ঘুমের বিভিন্ন অভ্যাসের কথা জিজ্ঞেস করে জানলেন। দেহের গঠন-প্রকৃতি বিশেষভাবে লক্ষ্য করলেন। বিশেষত তাঁর পৃষ্টাদেশ দেখলেন। তাতে মোহরে নবুওয়াত বর্ণিত মতে দেখতে পেলেন। বিস্ময়ে আনন্দে বিহবল হয়ে বাহিরা দেখলেন, সবই পূর্ববর্তী আসমানী গ্রন্থসমূহের বর্ণনার সাথে সম্পূর্ণ মিলে গেছে।
তারপর বাহিরা আবূ তালিবকে কাছে ডেকে জিজ্ঞেস করলেনঃ ছেলেটি কে ? আবূ তালিব বললেনঃ আমার। বাহিরা বললেনঃ কিন্তু এ ছেলের তো পিতা জীবিত থাকার কথা নয়। আবূ তালিব বললেনঃ “আসলে সে আমার ভাতিজা।” বাহিরা জিজ্ঞেস করলেনঃ তাঁর পিতার কি হয়েছে ? বললেনঃ তার মায়ের পেটে থাকা অবস্থায়ই পিতা ইন্তিকাল করেন।
চমৎকৃত হয়ে বাহিরা বললেন, এরকমই তো হওয়ার কথা। আপনি আপনার ভাতিজাকে নিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশে ফিরে যান। ইহুদীদের থেকে তাকে সাবধানে আগলে রাখবেন। আল্লাহর কসম ! ওরা যদি একে দেখতে পায় এবং নিদর্শনাবলি থেকে আমি যেমন চিনতে পেরেছি ওরাও তেমনি চিনে ফেলতে পারে তবে ওরা এ বালকের ক্ষতি করার সমূহ চেষ্টা করবে। কারণ আপনার ভাতিজাই ভবিষ্যত মানবজাতির পথপ্রদর্শক-নবী। একথা শুনে আবূ তালিব সেখানেই দ্রুত তাঁর মালামাল বিক্রয় করে দিলেন। আশাতীত মুনাফা হলো এবং রাসূলুল্লাহ (সা)-কে নিয়ে দ্রুত দেশে ফিরে এলেন।
তথ্যসূত্র
• মাদারেজুন্নাওয়াত
• রাসুলুল্লাহ (সঃ) এর জীবনে আল্লাহর কুদরত ও রুহানিয়াত (লেখকঃ মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল গফুর হামিদী, প্রকাশকঃ ইসলামিক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ)

আসরের ওয়াক্ত শুরু

আসরের ওয়াক্ত শুরু। সবাইকে নামাজ পড়তে হবে। অজুর জন্য পানির প্রয়োজন। কিন্তু পানি পাওয়া যাচ্ছে না।নবীজীর(সাঃ) সামনে একটি পাত্রে সামান্য একটু পানি যা দিয়ে একজনের অজুও হয় না। সাহাবীদের সংখ্যা অনেক। নবীজী(সাঃ) তাঁর সামনে রাখা পাত্রের পানিতে তদীয় পবিত্র হস্ত মুবারক রাখলেন।আর ততক্ষনাৎ তাঁর আংগুলের ফাক দিয়ে পানি উথলে উঠা শুরু করল। নবীজী(সাঃ) সবাইকে দ্রুত অজু সেরে নিতে বললেন। সবাই অজু করলেন। শেষে নবীজীও করলেন। হাদীসের বর্ণনায়----
একঃ
আবদুল্লাহ ইব্‌ন ইউসুফ (রঃ).....আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে দেখলাম, তখন আসরের সালাতের সময় হয়ে গিয়েছিল। আর লোকজন উযূর পানি তালাশ করতে লাগল কিন্তু পেল না। তারপর রাসূলুল্লাহ (সাঃ) পাত্রে তাঁর হাত রাখলেন এবং লোকজনকে তা থেকে উযূ করতে বললেন। আনাস (রাঃ) বলেন, সে সময় আমি দেখলাম, তাঁর আঙ্গুলের নীচ থেকে পানি উথলে উঠছে। এমনকি তাদের শেষ ব্যক্তি পর‌্যন্ত তা দিয়ে উযূ করল। (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড, ১৭০ নং হাদিস, ইফা)
দুইঃ
‘আবদুল্লাহ ইব্‌ন মুনীর (রঃ)..... আনাস ইব্‌ন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ একবার সালাতের সময় উপস্থিত হলে যাঁদের বাঢ়ী নিকটে ছিল তাঁরা (উযূ করার জন্য) বাড়ী চলে গেলেন। আর কিছু লোক রয়ে গেলেন (তাঁদের কোন উযূর ব্যাবস্থা ছিল না)। তখন রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর জন্য পাথরের পাত্রে পানি আনা হল। পাত্রটি এত ছোট ছিল যে, তার মধ্যে তাঁর উভয় হাত মেলে দেওয়া সম্ভব ছিল না। তা থেকেই কওমের সকল লোক উযূ করলেন। আমরা জিজ্ঞাসা করলামঃ ‘আপনারা কতজন ছিলেন’? তিনি বললেনঃ ‘আশিজন বা আরো বেশী। (বুখারী শরীফ ১ম খন্ড, ১৯৫ নং হাদিস, ইফা)

Thursday, 21 July 2016

মানত ভঙ্গ করার পরিণতি


ফরিদপুর জেলার এক কৃষক, যিনি বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরীর (কুঃ ছেঃ আঃ) একজন মুরীদ, দরবার শরীফে গিয়ে হযরত কেবলাজন হুজুরের কাছে অতি উদ্বেগের সাথে নালিশ জানালেন যে, তিনি তার জমিতে বেগুনের চাষ করেন। কিন্তু ঝাঁকে ঝাঁকে বুলবুলি পাখি এসে সব বেগুন খেয়ে ফেলে, নষ্ট করে ফেলে। লোকটির নালিশ শুনে পীর কেবলাজান খুব অবাক হয়ে মধুর কন্ঠে জিজ্ঞাসা করলেন, “কেন বাবা? বুলবুলি পাখি আপনার বেগুন ক্ষেত নষ্ট করে ফেলে কেন?”
আগত জাকের ভাই এবার বিস্তারিত সব ঘটনা খুলে বললেন, “ হুজুর, আমি জমিতে বেগুনের চাষ করে নিয়্যত করেছিলাম যে, প্রথম ফলনের সব বেগুন হুজুর পাকের দরবারে নজরানা হিসেবে দিয়ে দেব। কিন্তু প্রথম ফলন খুব ভাল হওয়াতে এবং বেগুনের দামও হঠাত খুব বেড়ে যাওয়াতে নিয়্যত পাল্টে ফেলে মনে মনে ঠিক করলাম যে, এবার না হয় দরবার শরীফে বেগুন নাইবা দিলাম। ভালো মূল্যে এবারের বেগুন গুলো বিক্রি করে পুজি বাড়িয়ে পরবর্তী বছরে বেগুন দরবার শরীফে দিয়ে দেব”। এ পর্যন্ত বলে চাষী একটু ঢোক গিললেন। পরের কথা গুলো বলার আগে হুজুর পাকই জিজ্ঞাসা করলেন, “তারপর কি হলো বলেন।” বেগুন চাষী জাকের ভাই জানলেন যে, দ্বিতীয় দফায় বেগুন গাছে ফুল ধরতে শুরু করলো, তখন কোথা থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বুলবুলি পাখি এসে তার ক্ষেতের বেগুন ফুল খাওয়া শুরু করল। ফলে সেবার ফলনও খুব কম হলো। তাই সেবারও নিয়্যত পাল্টে সিদ্ধান্ত নিলেন যে, এত কম ফলনের বেগুন দরবারে না দিয়ে পরর্বতী ফলনে (তৃতীয় দফায়) যে বেগুন হবে সেগুলো হুজুর পাকের দরবারে নজরানা হিসেবে দিয়ে দেবেন, আর এতে কোন অন্যথা করবেন না। কিন্তু পরবর্তী দফায় হতভাগ্য বেগুন চাষীর কপালের দূর্ভোগ আরো বেড়ে গেল। এবার আগের চেয়েও অনেক বেশী সংখ্যক বুলবুলি পাখি ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে এসে বেগুনের শুধু ফুলই নয়, ফুল শুদ্ধ গাছের ডগা পর্যন্ত খেয়ে ফেলল।
ঠোকর দিয়ে সব গাছ একেবারে ছিন্নভিন্ন করে ফেলল। ফলে বেগুন চাষী এখন সর্বস্বান্ত হবার পথে। তাই তিনি বাধ্য হয়ে খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) স্মরণাপন্ন হয়েছেন। উদ্দেশ্য, খাজাবাবা যেন দয়া করে এ মহা মছিবত থেকে উদ্ধারে তার জন্য আল্লাহর দরবারে দু‘আ করেন।
সব শুনে হযরত কেবলাজান হুজুর আপন স্বভাবজাত মধুর সুরে বিস্ময়ের কন্ঠে বললেন, “বাবা, বুলবুলি পাখি যে আপনাকে শুদ্ধ খেয়ে ফেলেনি, এটাই আপনার পরম সৌভাগ্য। ওলী আল্লাহদের সাথে মুনাফেকী করা ঠিক নয়”।
(তথ্যসূত্রঃ বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী(কুঃ) ছাহেবের কতিপয় অবিস্মরনীয় কারামত)

Monday, 18 July 2016

মায়ের মমতা এবং হযরত সোলায়মান(আঃ)-এর বিচক্ষণতা



নবী হযরত দাউদ (আঃ) এর যামানার ঘটনা। দুইজন মহিলা তাহাদের নিজ নিজ কোলে একটি করিয়া শিশু বহন করিয়া কোথাও যাইতেছিল। পথিমধ্যে এক মহিলা বাঘের আক্রমণের মুখে পতিত হইয়া স্বীয় শিশুটি হারাইল।নিজের শিশু হারাইয়া কি করিবে কিছু স্থির করিতে না পারিয়া তাহার সঙ্গী মহিলাটির কোল হইতে উহার শিশুটিকে ছিনিয়া নিয়া বলিল, এই শিশুটি আমার। তোমার শিশু বাঘে নিয়া গিয়াছে। উভয়ের মধ্যে খুব বাচসা ও কথা কাটাকাটি হইল। পরিশেষে উহারা উভয়ে নবী হযরত দাউদ (আঃ) এর দরবারে উপস্থিত হইয়া একে অপরের বিরুদ্ধে নালিশ জানাইল।
নবী হযরত দাউদ (আঃ) বিচার শেষে সেই কুচক্রী মহিলাটিকে শিশুটি দিয়া দিলেন। এই খবর শুনিয়া তাহার ছেলে হযরত সোলায়মান (আঃ) স্বীয় পিতার নিকট বলিলেন, “আব্বাজান! এই ব্যাপারে আমার নিকট একটি চমতকার সমাধান আছে, আপনি অনুমতি দিলে শুনাইতে পারি।” নবী হযরত দাঊদ (আঃ) অনুমতি দিলে হযরত সোলায়মান (আঃ) বলিলেন, আমি শিশুটিকে এখনই দুই টুকরা করিয়া অর্ধেক করে উভয়ের মধ্যে বন্টন করিয়া দিব।” এই ফয়সালা শুনিয়া কুচক্রী মহিলাটি নিশ্চুপ রহিল। আর শিশুর আসল মাতা বলিয়া উঠিল, “ হুযুর! শিশুটি উহাকে দিয়া দিন। আল্লাহর কসম দিতেছি শিশুটিকে দুই টুকরা করিবেন না।” তখন হযরত সোলায়মান (আঃ) বলিলেন, শিশুর আসল মাতা হইল এই রমণীই। যাহার অন্তরে মাতৃ মমতা নিহিত রহিয়াছে, সেই উহাকে দ্বিখন্ডিত করনের ফয়সালায় বাধা হইয়া নিজ দাবী পরিত্যাগ করিয়াছে। অতঃপর শিশুটিকে তাহার আসল মাতার নিকট অর্পণ করিলেন।
তথ্যসূত্রঃ
* মিশকাত শরীফ- ৫০০ পৃঃ
* ফতহুল বারী দ্বাদশ খন্ড- ২৬৮ পৃঃ
* ইসলামের জীবন্ত কাহিনী- ১০০ পৃঃ

Sunday, 3 July 2016


¤.বিশ্বনবী (সাঃ) একদিন বাহির থেকে এসে তাঁর নাতি হাসান এবং হোসাইনকে আদর করছিলেন।হঠাৎ হোসাইন (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, বলেনতো নানা আপনি বড় নাকি আমি বড়? রাসূল(সাঃ) হেসে বললেন,"দুনিয়ার সকল মানুষের নেতা আমি।সেজন্য আমিতো অবশ্যই বড়"কিন্তুছোট্ট হোসাইন বললেন,না নানা,আমি আপনার চেয়ে বড়।
রাসূল(সাঃ) বললেন, "তুমি আমারচেয়ে বড়, এটার যুক্তি দেখাওতো?
"ছোট্ট হোসাইন বললেন,দেখি আপনার বাবার নামকি বলেন?
রাসূল (সাঃ) বললেন আবদুল্লাহ।
.
হোসাইন বললেন, শুধুই আবদুল্লাহ। আগেও কিছু নাই,পরেও কিছু নাই। আমার বাবার নামকি জানেন ? আমার বাবার নাম আসাদুল্লাহিল গালিব, আলী ইবনে আবি তালিব,সারা দুনিয়ার কাফিরদের যম।আপনি এমন এক আব্বা পেয়েছেন কি?তাহলে তো আমিই আপনার চেয়ে বড়।রাসুল (সাঃ) অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন হোসাইনের দিকে।.হোসাইন (রাঃ) বললেন,নানা এখানেই শেষ নয়। দেখি আপনার আম্মার নামকি বলেন।
রাসূল (সাঃ) বললেন,আমিনা।
.হোসাইন বললেন, শুধুই আমিনা।আর আমার আম্মার নামকি জানেন? আমার আম্মার নাম হলো,ফাতিমাতুজ জাহরা, জান্নাতের সর্দারীনী। এরকম একটি আম্মা কি আপনি পেয়েছেন? তাহলেতো এদিক দিয়েও,আমি আপনার চেয়ে বড়।রাসূল (সাঃ) আবারো অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। হোসাইন আবার বললেন,নানা এখানেই শেষ নয় আরো আছে। দেখি বলুনতো আপনার নানির নামকি? রাসুল (সাঃ) তাঁর নানির বললেন।এবার হোসাইন বললেন, "আমার নানির নাম কি জানেন? আমার নানির নাম হলো,খাদিজাতুল কোবরা,জান্নাতে প্রথম মহিলা হিসেবে প্রবেশ করবেন।এরকম নানি কি আপনি পেয়েছেন? তাহলে তো এখান দিয়েও আমি আপনার বড়" .রাসূল (সাঃ) নিজের চোখের পানি ছেড়ে দিলেন।.হোসাইন বললেন,নানা আরো আছে আরো আছে।বলুনতো আপনার নানার নাম কি??রাসূল (সাঃ) উনার নানার নামবললেন।এবার হোসাইন বললেন, আমার নানার নাম কি জানেন? আমার নানার নাম হলো রহমাতুল্লিল আ'লামিন,বিশ্বনবী মোস্তফা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)এই রকম একজন নানা কি আপনি পেয়েছেন??? তাহলে আপনি নিজেই বলুন,কে বড়? আপনি বড়নাকি আমি বড়?.
রাসূল (সাঃ) হোসাইনকে শক্তকরে জড়িয়ে ধরে বললেন,হ্যাঁ হোসাইন।
আল্লাহ আজ তোমাকে আমার চেয়ে বড় বানিয়ে দিয়েছেন।.


Monday, 27 June 2016

ওলী আল্লাহগনের বানি?



পয়গম্বরগনের পরিপর্ণ অনুসরণ, অনুগম্ন ও তোফায়েকের মাধ্যমে মারেফাতের শেষের শেষ মাকামে পৌঁছাইয়া কিছু কিছু উম্মতেরা তাকওয়ার হাকীকী গুন অর্জন করিয়াছেন; তাহারাও পয়গম্বরগণের মতই সর্ব্দাই খোদাভিতিতে উদ্বেলিত থাকিতেন। যেমন;হযরত আবু বকর (রাঃ) ছাহেব- যিনি খোদার ভয়ে সর্বদাই ভীত থাকিতেন।মাঝে মাঝেই বলিতেন, “হায়!আমি যদি কোন বৃক্ষ হইতাম,তবে কতইনা ভালো হইত।আমাকে হিসাব নিকাশের দায়ে পরিতে হইতনা।”
হজরত উমর (রাঃ)ছাহেব পবিত্র কোরান শরীফের কোন আয়াত শ্রবণ করিলে মূর্চিত হইয়া পড়িতেন এবং কোন কোন সময় তাহার মুর্ছা এমন গুরুতর হইত যে,কয়েকদিন পর্যন্ত শয্যাশয়ী হইয়া থাকতেন।লোকজন তাহাকে দেখিতে আসিত।আল্লাহতায়ালার ভয়ে তিনি এত অধিক ক্রন্দন করিতেন যে,অবিরাম ধারায় অশ্রু প্রবাহিত হওয়ার কারণে তাহার গন্ডদ্বয়ের উপর দুইতি কৃষবর্ণ রেখা পড়িয়া গিয়েছিল।তিনি প্রাই বলিতেন, “হায়!কতই ভাল হইত,যদি উমর মাতৃগর্ভ হইতে ভুমিষ্ট না হইত।”একদা তিনি উটে আরোহন পুর্বক কোথাও যাইতেছিলেন,পথিপার্শ্বস্থ কোন এক গৃহে এক ব্যক্তি কুরআন শরীফ তেলাওয়াত করতেছিলেন।তিনি যখন সেই পথ অতিক্রম করতে ছিলেন, ঠিক সেই সময় পাঠক তেলেওয়াত করিলেন,অর্থাৎ-‘নিশ্চই তমার প্রভুর আযাব ঘটিবেই ঘটিবে।’(সুরা তুরঃ৭)আয়াতটি শ্রবন মাত্রই হযরত উমর (রাঃ)   এর দেলে ভিষণ ভয় সঞ্চারিত হইল।ভয়ে অবসন্ন হইয়া পড়িবার উপক্রম হইলে তিনি  উষ্ট্র হইতী নামিয়া নিকটস্ত একতি দেওয়ালের গায়ে হেলান দিয়া বসিলেন।শক্তি লোপ পাইয়া যাওয়ায় লোকজন আসিয়া তাহাকে ধরাধরি করিয়া গৃহে লইয়া গেল।এই ঘটনায় একমাস যাবৎ তিনি পিড়িত চ্ছিলেন।অথচ পীড়ান কারণ কেহই বুঝিতে পারে নাই।
উচ্চস্তরের ওলী আল্লাহ সকল তাকওয়ার  হাকিকী গুন সমৃদ্ধ ছিলেন। উচ্চতম পর্যায়ের তাকওয়া বা খোদাআভোতি বা পরহেজগারীর গুন তাহারা অর্জন করিতে পারিয়াছিলেন। তাই শেষ নিঃশ্বাসের চিন্তায় তাহারা সদাআ চিন্তিত থাকিতেন। যদি শেষ নিঃশ্বাস আল্লাহর ইয়াদের সহিত বাহির না হয়-তাহা হইলে সারা জীবনে ইবাদতই যে পন্ড হইবে; এই ভয়র তাহারা সারা জীবন ক্রন্দন করিতেন। তাকওয়ার হাকীকী গুণে গুনান্বিত সাধকবর্গ অধিক চিন্তাযুক্ত হওয়ার আরও এক কারণ এই যে, তাহারা জানেনঃ খোদাতায়ালা “খায়রুল মাকেরীন” অর্থাৎ সর্বশ্রেষ্ঠ রহস্যময়। তাহার ক্ষমতার যেমন পারাপার নাই, তেমনি তাহার রহস্যেরও শেষ নাই।

Tuesday, 21 June 2016

বনের পশু কামেল পীরের কথা শুনে


ফরিদপুর জেলার বাহাদুরপুর এলাকার একজন চাষী তার দুই বিঘা জমিতে আখের চাষ করে সন্তান-সন্ততি ও পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু এক পর্যায়ে তার আখ ক্ষেতে ভীষন শিয়ালের উপদ্রব শুরু হলো। প্রতি রাতে দলবদ্ধ ভাবে শিয়াল ক্ষেতের আখ খেয়ে ফেলে। নানা কৌশল অবলম্বন করেও শিয়ালের আক্রমন থেকে ক্ষেতের আখ রক্ষা করা যাচ্ছেনা দেখে খুব শক্ত করে ক্ষেতের চারদিকে বেড়া দিলেন।
কিন্তু এতে ফল হলো উল্টো। শিয়ালের আক্রমন আরো বেড়ে গেল। এখন দলে দলে অনেক শিয়াল একত্রে এসে ক্ষেতের বেড়া ভেঙ্গে আগের চেয়েও বেশি আখ নষ্ট করে ফেলতে লাগলো। বেচারা গরীব চাষী একেবারে নিঃস্ব হওয়ার পথে। শেষ পর্যন্ত কোন উপায় না দেখে একজনের পরামর্শে আটরশির বিশ্ব জাকের মঞ্জিলে গিয়ে যামানার মহা ইমাম, মহা মুজাদ্দেদ বিশ্বওলী হযরত শাহসূফী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) কেবলাজন হুজুরের কাছে তার দুরাবস্থার কথা জানালেন এবং শিয়ালের উপদ্রব থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য হুজুর কেবলাজানের দয়া ভিক্ষা চাইলেন। লোকটির অসহায় অবস্থার কথা শুনে মানব দরদী, কামেল মোকাম্মেল ওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেব অত্যন্ত মধুর কন্ঠে আগত চাষীকে এক অভিনব এবং আশ্চর্য উপদেশ দিয়ে বললেন,“ বাবা আপনি গিয়ে আখ ক্ষেতের বেড়া খুলে দিবেন। তার পর আবার যখন শিয়াল আসবে তখন আপনি শিয়ালদের দলপতিকে উদ্দেশ্যে করে খুব বিনয়ের সাথে বলবেন, দেখেন আমি খুব গরীব মানুষ। এই আখ ক্ষেতের আখ বিক্রি করেই আমার স্ত্রী-পুত্র পরিজন নিয়ে কোনমতে বেঁচে আছি। আপনারা আমার আখ ক্ষেতের আখ খেয়ে ফেললে আমি ছেলে মেয়ে নিয়ে বাঁচবো কি করে? তাই আমার অনুরোধ আপনারা এসে দু চারটা আখ খেয়ে চলে যাবেন। এ পর্যন্ত বলেই কেবলাজন হুজুর তাকে নির্দেশ দিলেন, “যান বাবা, যেভাবে বললাম সেভাবে কাজ করেন গিয়ে।”
অতঃপর বাহাদুরপুরের সেই আখচাষী বাড়ীতে গিয়ে ক্ষেতের বেড়া খুলে দিলেন এবং রাতের বেলায় শিয়ালের আগমনের প্রতিক্ষায় থাকলেন। এক সময় দলপতির নেতৃত্বে একদল শিয়াল আখ ক্ষেতে এসে ঢুকে পড়বে, ঠিক সেই সময় উক্ত চাষী হযরত কেবলাজান হুজুরের শেখানো কথা গুলোই দলপতিকে উদ্দেশ্য করে বললেন। এতে আশ্চর্য কাজ হলো, শিয়ালগুলো আখ ক্ষেত ছেড়ে চলে গেল। আর কখনো দু‘চারটি আখ খেতেও আসেনি।
বিশ্বওলী, মহাওলী, শতাব্দীর মহা কামেল হযরত শাহসূফী ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) ছাহেব এভাবে বনের পশুকেও বশীভুত করার বিস্ময়কর কৌশল অতি সাধারণ মানুষকেও শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। একমাত্র বিশ্বাসী আশেক হৃদয় ছাড়া মাশুকের প্রেমের খেলা বুঝতে পারেনা।
(তথ্যসূত্রঃ বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী (কুঃ ছেঃ আঃ) এর কতিপয় অবিস্মসরণীয় কারামত, শিকদার তোফাজ্জল হোসেন।)

Friday, 17 June 2016

সম্রাট আকবর ও আকবর প্রবর্তিত খিচুরী ধর্ম ‘‘দীনে -এলাহীর'' পরিচয়ঃ




সম্রাট আকবরের পিতার নাম বাদশাহ হুমায়ুন। ১৫৪০ খৃষ্টাব্দে কনৌজের যুদ্ধে হুমায়ুন শেরশাহের নিকট পরাজিত হইয়া বিভিন্ন স্থানে ঘুরিয়া বেড়াইবার পর যখন অমরকোটের রানা প্রসাদের রাজ্যে আশ্রয় নেন, তখন, ১৫৪২ খৃষ্টাব্দের ২৩ শে নভেম্বর আকবর জন্ম গ্রহণ করেন।
সুদীর্ঘ পনেরো বৎসর এখানে সেখানে ঘুরিয়া বেড়াইবার পর শুর শাসকদের পারস্পপারিক অন্তদ্বন্দের সুযোগে হুমায়ুন ১৫৫৫ খৃষ্টাব্দে সেরহিন্দের নিকটে সিকান্দার শুরকে পরাজিত করিয়া লাহোর দখল করেন। সেই বছরই তিনি দিল্লী আগ্রা অধিকার করেন। ইহার অল্প কয়েকদিন পরে ১৫৫৬ খৃষ্টাব্দে ২৪ শে জানুয়ারী হুমায়ুন ইন্তেকাল করেন। হুমায়ুনের ইন্তেকালের পর আকবর ১৫৫৬ খৃষ্টাব্দের ১৪ই ফেব্রুয়ারী দিল্লীর সম্রাট হিসেবে ঘোষিত হন। তখন তাহার বয়স মাত্র তের বছর। ইহার পাঁচ বছর পর ১৫৬০ খৃষ্টাব্দে আকবর তদীয় ১৮ বছর বয়সে দিল্লীর শাসনভার স্বহস্তে গ্রহণ করেন এবং রাজ্য পরিচালনা করিতে থাকেন।
প্রথম জীবনে সম্রাট আকবর একজন সুন্নী মুসলমান ছিলেন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করিতেন; শরীয়তের অন্যান্য হুকুম-আহকাম যথারীতি মানিয়া চলিতেন। অনেক সময় তিনি আযান দিতেন এবং নামাজে ইমামতিও করিতেন। কিতাবে দেখা যায়, কখনও কখনও তিনি মসজিদও ঝাড়ু দিতেন। প্রতি বছর হজ্বের মওসুমে আকবর একজনকে আমীর-ই-হজ্ব' নিযুক্ত করিয়া বলিতেন, যে কেহই তাহার সহিত হজ্বে গমন করিবেন, তাঁহার সমুদয় খরচ সরকার বহন করিবে।" ইহা ছাড়াও প্রতি বছর তিনি পবিত্র কাবা ঘরের জন্য এবং উহার প্রতিবেশীদের জন্য দামী দামী উপহার প্রেরণ করিতেন।
কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন মুখী প্রভাবে প্রভাবিত হইয়া আকবর সত্য পথচ্যুত হইয়া এক অদ্ভূদ ধর্মমত প্রচার শুরূ করেন-যাহা ছিল ইসলাম পরিপন্থী ও মুসলিম স্বার্থের বিপরীত কর্মকান্ড।
ইতিহাস পর্যালোচনা করিলে দেখা যায় যে, ষোড়শ শতাব্দী ছিল সন্দেহ, সংশয় ও অনুসন্ধানের যুগ। সে যুগ ছিল ধর্মান্দোলনের যুগ; পরমত সহিঞ্চুতার যুগ। এই যুগে আবির্ভাব হয় বিশ্ব প্রেম ও ভাতৃত্ববোধ প্রচারক বিভিন্ন সাধু পুরুষের। কবির, নানক, শ্রীচৈতন্য ইহাদের মধ্যে অন্যতম। এই সমস্ত ধর্ম নেতার প্রভাব আকবরের উপর পতিত হয়। ষোড়শ শতাব্দিতে এই উপমহাদেশে মাহ্দী আন্দোলন ও রাসনী আন্দোলনও মানুষের মনকে আচ্ছন্ন করে। ‘‘মাহদী'' পন্থীদের বিশ্বাস হাজার বছরের শেষভাগে পাপ-পঙ্কিলতা হইতে মানব জাতিকে উদ্ধারের জন্য একজন মাসীহ পৃথিবীতে আবির্ভূত হইবেন। জনৈক সৈয়দ মুহাম্মদ নামক এক জৌনপুর নিবাসী এই মাহদী আন্দোলনের সূচনা করেন এবং নিজেকে সেই বিশেষ মাহ্দী বলিয়া ঘোষণা করেন। অনুরূপে আফগান স্থানে রাসনী আন্দোলন মাথাচাড়া দিয়া উঠে। রাসনীগণও একজন মাসীহ বা উদ্ধার কর্তার আবির্ভাবে বিশ্বাস করিত। এই সকল আন্দোলনের অশুভ প্রভাবও আকবরের উপর পড়ে এবং তিনিও একজন ‘‘ধর্মপ্রবর্তক'' হওয়ার সংকল্প করেন।
পরে সকল ধর্মের মূল তথ্য সম্পর্কে জানিবার উদ্দেশ্যে ফতেহপুর সিক্রিতে ৯৮৩ হিজরীতে একটি ‘‘এবাদতখানা'' নির্মাণ করেন। সেখানে আমন্ত্রন করেন সকল ধর্মের মনীষীগণকে। ফলে যেমনি ইসলাম ধর্মের আলেমসকল সেখানে উপস্থিত হইতেন, তেমনি হিন্দু ধর্মের সাধু-সন্নাসীগণ, খৃষ্টান ধর্মের পাদ্রী বা ধর্মযাজকগণ, জৈন ধর্মের পন্ডিতগণও সেখানে উপস্থিত হইতেন এবং ধর্মীয় রীতি-নীতি সম্পর্কে পরস্পর আলাপ আলোচনা ও তর্কযুদ্ধে লিপ্ত হইতেন। সকলের জন্য আকবরের ‘‘এবাদতখানা'' উম্মুক্ত থাকায় সেখানে ভন্ড সূফীগণ ও দুনিয়াদার আলেমগণও উপস্থিত হইয়া ধর্মালোচনায় অংশ গ্রহণ করিত।
বাদশাহ আকবর ছিলেন নিরব। তিনি পড়িতে পারিতেন না। তাই বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসী মনীষীগণের ধর্মালোচনা তিনি শুনিতে পছন্দ করিতেন। ফলে সকল ধর্মের প্রভাবই তাহার উপর পড়ে। বিভিন্ন ধর্মের নেতা বা ধর্মগুরু বা মনীষীদের প্রভাবে প্রভাবিত হইয়া, দুনিয়াদার ও অসৎ আলেমদের পরামর্শে ও প্ররোচনায় সত্য ইসলাম বিধ্বংসী, সর্ব-ধর্ম-সার সমন্বয়ে এক অদ্ভুদ ‘‘খিচুড়ী ধর্ম'' দীনে এলাহী প্রবর্তন করেন।
দীনে এলাহীর আইন প্রণয়নের জন্য আকবর চল্লিশ রত্ন নামে একটি ‘‘পরামর্শ সভা'' গঠন করে। সভার সকল সদস্যই ছিল সত্য পথচ্যূত। তাহারা আপন আপন ‘‘বিবেক ও যুক্তি-তর্কের'' মাপ কাঠিতে সব কিছুকে বিচার করিত। যাহা তাহাদের নিকট বিবেক সম্মত হইত, তাহাই দীন-ই-এলাহীর নতুন আইন হিসাবে গৃহীত হইত








সম্রাট আকবর প্রবর্তিত দীন-ই-এলাহীর সংক্ষিপ্ত পরিচয় নিচে তুলিয়া ধরা হইল।
দীন-ই-এলাহীর রূপরেখাঃ-

১। দীনে এলাহীর মূলমন্ত্র-‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আকবারু খালিফাতুল্লাহ।''
২। নব এই ধর্মে রাসূলে পাক (সাঃ) কে রাসূল হিসেবে স্বীকার করা রাষ্ট্রীয় বিধানে দন্ডনীয় অপরাধ বলিয়া সাব্যস্ত হয়। তদস্থানে আকবরকে
আল্লাহর প্রতিনিধি' স্বীকার করা রাষ্ট্রীয় ও ধর্মীয় কর্তব্য বলিয়া নির্ধারিত হয়।
৩। নব ধর্মে ইসলামের পাঁচটি স্বম্ভকেই অস্বীকার করা হয়।
৪। নব ধর্ম অনুসারীদের তথাকথিত ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার শপথ বাণী ছিল নিম্নরূপ
‘‘আমি অমুকের পুত্র অমুক। এ যাবৎ বাব-দাদার ধর্মের অনুসারী ছিলাম। এখন স্বেচ্ছায় ও স্বজ্ঞানে তাহা পরিত্যাগ করিয়া বাদশাহ আকবরের দীনে এলাহী গ্রহণ করিতেছি এবং এই ধর্মের খাতিরে জান, মাল, ইজ্জত ও পূর্ব ধর্ম পরিত্যাগ করিতে প্রস্তুত আছি।' কাজেই নবধর্মে অনুসারীদেরকে সম্রাটের উদ্দেশ্যে চারিটি জিনিস-ধন, জীবন, ইজ্জত ও ধর্ম বিসর্জন দিতে হইত। দীন-এ-এলাহীর অনুসারীদেরকে চেলা'' বলা হইত।
৫। আকবর প্রত্যেক
চেলা'কে নিজের ক্ষুদ্র একখানি ফটো দান করিতেন। চেলা সকল তাহা সৌভাগ্যের প্রতীক স্বরূপ আপন আপন পাগড়ীর সহিত লাগাইয়া রাখিত।
৬। নবধর্মে সূর্য পূজা, নক্ষত্র পূজা, অগ্নি, বৃক্ষ বা গরু পূজা প্রবর্তিত হয়। বাদশাহ আকবর প্রত্যহ নিজে চারবার-ভোরে, দ্বিপ্রহরে, সন্ধ্যায় ও মধ্যরাতে বাধ্যতামূলক ভাবে সূর্য পূজা করিতেন। তাহার অনুসারীবর্গ বা চেলা সকলের প্রতিও সূর্য পূজার কঠোর নির্দেশ ছিল।
৭। বাদশাহের চেহারা দর্শন না করা পর্যন্ত দীন-এ-এলাহীর অনুসারীদের দাঁত মাজা বা কোন কিছু পানাহার করা নিষিদ্ধ ছিল। ভোরের সূর্য পূজা শেষে বাদশাহ বাহিরে আসিলে, নর-নারী নির্বিশেষে সকলেই একসংগে তাহাকে সেজদা করিত।
৮। নতুন ধর্মে
পুনর্জন্মবাদ'' বিশ্বাস করা হয়। বাদশাহ আকবর নিজেও বিশ্বাস করিতেন যে, মৃত্যুর পর তিনি অন্য কোন স্বর্ণ সিংহাসনের অধিকারী হইয়া একই রূপ প্রভাব-প্রতিপত্তির সহিত পুনরায় আবির্ভূত হইবেন।
৯। দীন-এ-এলাহীতে মদ পান বৈধ ঘোষণা করা হয়। বাদশাহ নিজে মদ পান করিতেন ও অন্যান্যদের মদ্য পানে উদ্বুদ্ধ করিতেন।
১০। নব ধর্মমতে সুদ-জুয়া, এমনকি যেনা পর্যন্ত বৈধ ঘোষিত হয়। বাদশাহ আকবরের নির্দেশে
‘‘শয়তান পুরে'' একটি জুয়ার ঘর স্থাপিত হয় এবং জুয়ারীদেরকে রাজভান্ডার হইতে সুদে টাকা ধার দেওয়া হয়।
১১। দীনে এলাহীতে দাড়ীমুন্ডন বৈধ ঘোষণা করা হয়। পুরূষদের জন্য রেশমী কাপড় বৈধ ঘোষণা করা হয়। পর্দা প্রথা তুলিয়া নেওয়া হয়।
১২। বিবাহ সংক্রান্ত আইন প্রবর্তন করা হয়। খালাতো, ফুপাতো, মামাতো, চাচাতে বোনকে বিবাহ অবৈধ বা হারাম ঘোষণা করা হয়।
১৩। খাতনা সম্পর্কে এই নির্দেশ দেওয়া হয় যে, বার বছরের পূর্বে কোন ছেলের খাতনা দেওয়া চলিবে না।
১৪। মৃতের দাফন সম্পর্কে এই নির্দেশ দেওয়া হয় যে, দাফনের সময় এই খেয়াল অবশ্যই রাখিতে হইবে, যেন মৃতের মস্তক পূর্ব দিকে এবং পদদ্বয় পশ্চিম দিকে থাকে। মুলতঃ কাবা শরীফের অবমাননার জন্য এমন নির্দেশ প্রদান করা হয়। বাদশাহ আকবর নিজেও শয়ন কালে স্বীয় পদদ্বয়কে কেবলার দিকে রাখিয়া শয়ন করিতেন।
১৫। নব ধর্মে গরূ জবাই বা কোরবানী নিষিদ্ধ করা হয়।
১৬। গরূ মহিষ, উট, বকরীর গোশত যাহা ইসলামী দৃষ্টিকোণে হালাল তাহা হারাম ঘোষণা করা হয় এবং বাঘ, ভাল্লুক, কুকুর, বিড়ালের গোশতকে হালাল করিয়া দেওয়া হয়।
১৭। আরবী এলেম শিক্ষা করাকে রাষ্ট্রীয় বিধানে অমার্জনীয় অপরাধ রূপে সাব্যস্ত হয়
ফলে বহু আলেম-উলামা দেশ ত্যাগে বাধ্য হন। মাদ্রাসা সমূহ বিরাণ হয়। এই সুযোগে বিধর্মীরা বহু মসজিদকে মন্দিরে পরিণত করে।
১৮। নবধর্মে একাদশীর দিনে উপবাস থাকা বাধ্যতামূলক ছিল। অথচ রমজানে রোজা না রাখিবার প্রতি আদেশ দেওয়া হইত। আকবর তাঁহার সভাসদদিগকে এই মর্মে নির্দেশ প্রদান করিতেন যে, তাহারা যেন মাহে রমজানে দরবারে প্রকাশ্যে পানাহার করেন। যদি তাহাদের কাহারোও পানাহারের ইচ্ছা না থাকে, তবে তিনি যেন কম পক্ষে মুখে পান পুরিয়া দরবারে আসেন। যদি এইরূপ না করা হয়, তবে তাহাকে রোজা রাখার অপরাধে পাকড়াও করা হইত।
১৯।
নওরোজ'' উৎসবের দিনে দরবারের আলেম-ওলামা, কাজী-মুফতী, সকলের জন্যই মদ্যপান বাধ্যতামূলক ছিল।
২০। দীনে এলাহীর অনুসারীদেরকে একে অন্যের সহিত সাক্ষাত হইলে
‘‘আস্সালামু আলাইকুম'-এর পরিবর্তে ‘‘আল্লাহু আকবর' এবং তদুত্তরে ‘‘জাল্লা জালালুহু মা আকবার শানুহু'' বলার নির্দেশ দেওয়া হইয়াছিল।
২১। দীনে এলাহীর ভক্তদের এই নির্দেশ দেওয়া হয়, তাহারা যেন প্রত্যেকে নিজ নিজ চিঠিপত্রের শিরোনামে
আল্লাহ' নামের সাথে আকবর' নামটি অবশ্যই লিখে। অন্যথায় নতুন আইনে ইহা দন্ডনীয় অপরাধ বলিয়া সাব্যস্ত হইবে।
২২। নতুন এই ধর্মে অগ্নি পূজাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। আকবর নিজে অগ্নিপূজা করিতেন এবং আবুল ফজলকে তাহার দরবারে
‘‘শিখা অনির্বাণ' প্রজ্জ্বলিত রাখিবার নির্দেশ দেন। সম্রাট আকবর দরবারে প্রদীপ জ্বালাইবার সময় দন্ডায়মান হইয়া উহার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা সভাসদদের প্রতি বাধ্যতামূলক করেন।
২৩। দীনে এলাহীতে নামাজ, রোজা, হজ্জ, যাকাত, এমনকি ঐ সমস্ত বিষয় যাহা নবুয়তের সহিত সম্পর্কিত, তাহার নাম দেওয়া হয়
অন্ধবিশ্বাস’’এই সমস্ত ব্যাপারকে অবাস্তব আখ্যা দেওয়া হয়।
২৪। নব ধর্মে ইহাও বিশ্বাস করিতে হইত যে, কোরান শরীফ আল্লাহর অহী নয়; ইহা নবী করীম (সাঃ) এর রচিত গ্রন্থ।