Friday, 6 May 2016

একাধিক পীর গ্রহণ করা জায়েজ কি না ?




প্রথমে দেখিতে হইবে মোরশেদ কামেল কি নাকেছ। যদি নাকেছ হয়, তবে বাঘ দেখিয়ে যেরুপ বকরী পলাইয়া যায়, সেরুপ তাহার নিকট হইতে ভাগিয়া যাওয়া  ফরজ ।আর যদি কামেল হন তবে তাহাকে ছাটিয়া অন্য পীর গ্রহণ করা নিষেধ। কিন্তু তিন কারনে অন্য পীর গ্রহণ করা জায়েজ আছে ।প্রথম যদি তাঁহার খেদমত করা সত্ত্বেও ফয়েজ না পাওয়া যায়। কেমন খেদমত যেরুপ মেহনত পরিশ্রম করিয়া হালাল হুজির দ্বারা পেট পূর্ণ করা যায় ।সামান্য খানার জন্য কত মেহনত ।আর আকেবাতের বেহেশতের বাদশাহী হাছেল করিতে  কি  রকম তপস্যার আবশ্যক বুঝিয়া দেখ ।দেখ হযরত মওলানা রুমী (রঃ) সাহেব কি রকম কঠোর খেদমত করিয়া তাঁহ্র পীর হযরত শামছ তীবরিজি (রঃ) সাহেবকে  বাধ্য করিয়াছিলেন ।দেখ হযরত ফরিদউদ্দিন আত্তার (রঃ) সাহেব যিনি বার বৎসর গাছের পাতা খাইয়া বার বৎসর কাঠের রুটি দেকাইয়া আপন নফছকে ভাড়াইয়া রাখিয়াছিলেন ।আর বার বৎসর দু পায়ে রশি লাগাইয়া কুয়াতে ঝুলিয়া আল্লাহ্‌ এবাদত করিয়াছিলেন ।এমন কি তাঁর চক্ষু পর্য্যন্ত কাককে খাওয়াইয়াছিলেন ।তিনিও কিরুপ কঠোর খেদমত করিয়া আপন পীর হযরত কুতুবুদ্দিন (রঃ) সাহেবকে বাধ্য করিয়াছিলেন বুঝিয়া দেখ ।পীরের সহিত তাঁহার এই সর্ত ছিল যে সাত বৎসর পর্য্যন্ত প্রত্যহ পীরকে না চাহিতে অজুর পানি যোগাইতে হইবে এবং তাহাজ্জতের নাআমাজের সময় পানি গরম করিয়া দিতে হবে ।সাত বৎসরের মধ্যে যদি ইহার ব্যতিক্রম হয় কিংবা পানির বর্তন ভাঙ্গিয়া যায় তবে আরও সাত বৎসর ঐরুপ কঠিন খেদমত করিতে হইবে।
যেহেতু আল্লার বীর হযরত ফরিদ উদ্দিন (রঃ) সাহেব দেলের মুখে তাহা স্বীকার করিয়া পীরের খেদমতে নিযুক্ত হইলেন। সাত বৎসরের শেষ রাত্রিতে হঠাৎ জলপাত্র ভাঙ্গিয়া গেল। তিনি তখন সত্বর আর একটি বর্তন সংগ্রহ করিয়া অজুর পানি গরম করিয়া দিলেন। পরদিন সকালে পীর সাহেব তাঁহাকে ডাকিয়া ফরমাইলেন, বাবা তুমি আপন অঙ্গিকার ঠিকমত পালন করিতে পার নাই, সুতরাং তোমামে আরও সাত বৎসর খেদমত করিতে হইবে ।হযরত ফরিদ উদ্দিন (রঃ) সাহ্রব দেমতে আরও সাত বৎসর ঐরুপ খেদমত করিতে লাগিলেন। শেষ দিনের রাত্রিতে প্রবল বেগে ঝড় বৃষ্টি হওয়াতে শহরের আগুন নিভিয়া গেল অতঃপর তিনি যৎপরনাস্তি ব্যস্ত হইয়া পড়িলেন। ঐ সময়ে হঠাৎ দরিয়ার পরপারে তাঁহার দৃষ্টি পড়াতে একটি আলো নজরে পড়িল। একে অন্ধকার রাতি তাহাতে জন্মানবের সাড়া নাই, সমস্ত স্থান নিরব ও নিস্তব্ধ এই অবস্থায় তিনি দরিয়ার কিনারায় পৌছিলেন। সেথায় কোন নৌকাদি ছিল না সুতরাং তিনি একটি মরা মানুশকে ধরিয়া পরপারে পৌছিলেন। তৎপর তিনি দেখিলেন যে এক বেশ্যার ঘড়ে আগুন জ্বলিতেছে। তাহাকে বলিলেন, মা তুমি দয়া করিয়া আমাকে একটু আগুন দাও। বেশ্যা তাঁহার রুপের ছটায় ও নয়নের শোভায় বিমোহিত হইয়া উন্মাদিনীর ন্যায় বলিয়া উঠিল, তুমি আমাকে মা বলিলে কেন? আমি তো কাহারও মা নই।  তোমাকে আমি আগুন দিব না। তা দিতে পারি যদি তোমার একটি চক্ষু খুলিয়া দাও। হযরত ফরিদ উদ্দিন (রঃ) সাহেব তাহাকে এক চক্ষু খুলিয়া দিয়া আগুন লইয়া দরিয়ার কিনারায় আসিলেন। পূর্ব্বৎ মরা মানুষ ধরিয়া নদী পার হইলেন।পীর সাহেব না চাহিতেই তিনি গরম পানি নিয়া হাজির করিলেন। রওশন দেল-ওয়ালা পীর বাতেনী চক্ষে সবই দেখিয়াছিলেন। সে কথা প্রকাশ না করিয়া শিষ্যকে জিগাসা করিলেন, বাবা তুমি মাথায় এরুপভাবে দেস্তার বাঁধিয়াছ কেন? আর কেনই বা এরূপ ছটফট করিতেছ?” তিনি উত্তর করিলেন, হযরত!আমার চক্ষু পীড়া হইয়াছে।‘’অতঃপর পীরের দোয়ায় তাঁহার চক্ষু মিলিল ।পরদিন হযরত কুতুব উদ্দিন (রঃ) সাহেব তাঁহাকে নিকটে  বসাইয়া অতীব স্নেহে বাতেনী নেয়ামত বখশেষ করতঃ খেলাফতি দিয়া বিদায় করিলেন।    

No comments:

Post a Comment