সাধারণ
মানুষের দৃষ্টি শক্তি ও আল্লাহর ওলীগণের দৃষ্টি শক্তি এক নয়। সাধারণ মানুষ
তাদের চক্ষু দ্বারা চোখের সামনের বস্তু ছাড়া আর কিছুই দেখতে পায় না, আর
আল্লাহর ওলীগণ তাঁদের অন্তরদৃষ্টি দ্বারা সৃষ্টি জগতের যে কোন অবস্থা তথা
ভিতর-বাহির অবলোকন করতে পারে। নিচে এ ব্যাপারে পবিত্র কোরআন ও হাদিসের
আলোকে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হলঃ
পবিত্র কোরআনের আলোকেঃ
মহান আল্লাহতা’লা বলেনঃ “ইন্না ফী যালিকা লা আ-ইয়া-তিল্ লিল্ মুতাওয়াচ্ছেমীন।” নিশ্চয় এতে গভীর দৃষ্টিশীলদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন (সূরা হিজরঃ ৭৫ নং আয়াত)
এই আয়াতে (লিল্মুতাঅস্সিমীন)বলতে আল্লাহর ওলীগণের অন্তরদৃষ্টিকে বুজানো হয়েছে। যেমনঃ
দলিলঃ হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন লোক। হজরত মুজাহিদ (রাঃ) বলেন আর্ন্তদৃষ্টি সম্পন্ন লোক (তাফছিরে মায়ালেমু তানজিল, ৩য় খন্ড ২৩৯ পৃঃ; তাফছিরে খাজেন, ৩য় খন্ড ৬০পৃঃ; তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১৪ তম খন্ড ৪২৮ পৃঃ; তাফছিরে তাবারী শরিফ, ১৪ তম খন্ড ৫০ পৃঃ; তাফছিরে কবির, ১৯ তম খন্ড ১৬৮ পৃঃ; তাফছিরে ইবনে আব্বাস ২য় খন্ড তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড ১৭২ পৃঃ; জালালাইন শরিফ, ২১৪ পৃঃ; ইবরে কাছির ,২য় খন্ড ,৬৯২পৃঃ; তাফছিরে দূর্রে মারছুর, ৪র্থ খন্ড , ১৯৪ পৃঃ;)
সুতরাং, এই আয়াতের সহজ অনুবাদ হবেঃ আর্ন্তদৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন।
তাফছিরে রুহুল মায়ানীতে আরোও উল্লেখে আছেঃ বিশিষ্ট সাহাবী হজরত জাফর ইবরে মুহাম্মদ (রাঃ) বলেনঃ (মুতাঅস্সিমীন) হলঃ অন্তরদৃষ্টি সম্পন্ন লোক (রুহুল মায়ানী, ১৪তম খন্ড, ৪২৮পৃঃ)।
এ ব্যাপারে আরোও উল্লেখ আছেঃ হজরত উবাইদ (রঃ)বলেন, এই আয়াতের ব্যাপারে আমি দ্বাহ্হাক (রঃ) কে বলতে শ্তনেছি (লিল মুতাওয়াচ্ছেমীন) হল দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন লোক(তাফছিরে তাবারী শরিফ, ১৪ তম খন্ড ৫৬০পৃঃ তাফছিরে কুরতবী, ১০ম খন্ড ৩৪পৃঃ)।
এ ব্যাপারে আরোও উল্লেখ আছেঃ হজরত আবু উবায়দা (রাঃ) বলেনঃ (লিল মুতাঅস্সিমীন) হলঃ চক্ষুস্মান ব্যক্তি (তাফছিরে কুরতবী, ১০ম খন্ড ৩৪পৃঃ )অন্তরদৃষ্টিকেই বলা হয় চক্ষুস্মান।
সুতরাং, পবিত্র কোরআন আল্লাহর নেক বান্দাগনের অন্তরদৃষ্টি স্বীকার করে। (লিল মুতাঅস্সিমীন গভীর চিন্তাশীল ও অন্তরদৃষ্টি সম্পন্ন লোক, যারা তাঁদের দৃষ্টিশক্তি দ্বারা চিহ্নিত করতে পারে এমনকি নিদর্শন দেখে প্রত্যেক বস্তর হাকিকত জানতে পারে (তাফছিরে আবু ছাউদ, ৪র্থ খন্ড , ৩০৭ পৃঃ; তাফছিরে রুহুর বয়ান, ৪র্থ খন্ড, ৫৮৯ পৃঃ)।
সুতরাং আল্লাহর ওলীগণ অন্তরদৃষ্টি দ্বারা সৃষ্টি জগতের যেকোন অবস্থা দেখতে পায় ও হাকিকতের জ্ঞানী হতে পারেন। হজরত আবু ছাইদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক (ছাল্রাল্লাহু আরায়হি ওয়া ছাল্লাম ) বলেছেনঃ তোমরা মু’মিনের অন্তরদৃষ্টিকে ভয় কর,নিশ্চয় তারা আল্লাহর নুর দিয়ে দেখেন ( জামে তিরমিজি শরিফ ২য় খন্ড ১৪৫ পৃঃ; তাফছিরে কাবির শরিফ, ১ম খন্ড , ১২৭ পৃঃ; ২৩ তম, খন্ড, ১৪৫পৃঃ; তাফছিরে রুহুল বয়ান ১ম খন্ড ৩৯ পৃঃ; ৪র্থ খন্ড ৫৯০ পৃঃ; ২য় খন্ড ৪৫৫ পৃঃ; তাবারানী তাঁর আওছাদে ২য় খন্ড ২৭১ পৃঃ; ও ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৯ পৃঃ; (সনদঃ হাছান) তাবারানী তাঁর “ কবিরে ( ১০২/৮) হাঃ ৭৪৯৪;মজমুয়ায়ে জাওয়াহেদ’ (২৭১/১০) ছেররুল আছরার, [কৃতঃহুজুর গাউছে পাক আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ)]১২২ পৃঃ; আলবেদায়া ওয়ান নেহায়া , ২য় খন্ড , ৪০৯ পৃঃ; তাফছিরে কুরতবী, ১০ ম খন্ড , ৩৪ পৃঃ; নাওয়াদেদরুল উছুল, ২৭১ নং হাঃ; থাফছিরে কুরতবী, ১৪ তম খন্ড , ৫০ পৃঃ; রুহুল মায়ানী, ১৪ তম খন্ড , ৪২৯ পৃঃ; তাফছিরে খাজেন, ৩য় খন্ড , ৬০পৃঃ; ইবনে কাছির, ২য় খন্ড ৬৯২ পৃঃ; সাবাছিদুল হাছানাহ, ১৯ পৃঃ; এহইযায়ে উলুমুদ্দিন, ৩য় খন্ড ৩২ পৃঃ; কাশফুল খফা, ১ম খন্ড ,৩৫ পৃঃ)।
এই হাদিস দ্বারা প্রমান হয়, মু‘মিনে কামেল তথা আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহর নূর দিয়ে সব কিছু দেখতে পারেন।
দলিলঃ হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, রাসূলে করিম (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা মু‘মিনের অন্তর দৃষ্টিকে ভয় কর, নিশ্চয় মু‘মিন আল্লাহর নূর দিয়ে দেখেন (তাফছিরে ইবনে কাছির, ২য় খন্ড ৬৯২পৃ; তাফছিরে তাবারী শরিফ, ১৪ তম খন্ড, ৫০পৃঃ,; আবু নুয়াইম তাঁর ‘হুলিয়াতে’ ৯৪/৪; তাফছিরে দূর্রে মানছুর, ৪র্থ খন্ড, ১৯৪ পৃঃ; দ্বায়ফুজ জামে,১২৭)।
এই হাদিসেও মু‘মিনে কামেলের অন্তর দৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।
দলিলঃ হজরত ছাউবান (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা মু‘মিনের অন্তর দৃষ্টিকে ভয় কর, নিশ্চয় তাঁরা আল্লাহর নুর দিয়ে দেখেন (তাফছিরে তাবারী শরিফ, ১৪তম খন্ড ৫০পৃঃ; তাফছিরে ইবনে কাছির, ২য় খন্ড, ৬৯২ পৃঃ; তাফছিরে দূর্রে মানছুর, ৪র্থ খন্ড, ১৯৫ পৃঃ; দ্বায়ফুজ জামে, ১৯৬; ঈমাম ছিয়তী (রঃ) এর “জামউছ ছাগীর” ১ম জিঃ ১৬পৃঃ; মাকাছিদুল হাছানা, ১৯ পৃঃ)।
এই হাদিসেও মু‘মিনে কামেল তথা আল্লাহর ওলীগণের অন্তর দৃষ্টিকে সমর্থন করা হয়েছে।
দলিলঃ হযরত আবু উমামা (রাঃ) নবী করিম (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীজি বলেনঃ তোমরা মু‘মিনের অন্তর দৃষ্টিকে ভয় কর, নিশ্চয় তাঁরা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখেন (তাবারানী তাঁর ‘আওছাতে, ২য় খন্ড, ২৭১ পৃঃ; তাবারানী তাঁর মুজামুল কাবিরে ৮/১০২; তাফছিরে কবির শরিফ, ১ম জিঃ ১২৭ পৃঃ; জামউছ ছাগীর, ১ম জিঃ ১৩ পৃঃ)
সর্বোপরি মু‘মিনে কামেল তথা আল্লাহর ওলীগণ অন্তর দৃষ্টি সৃষ্টি জগতের যে কোন কিছু অবলোকন করতে পারে। কারণ তাঁদের চোখে আল্লাহর নূর বিরাজ করে, এবং তাঁদের চোখ আল্লাহর মনোনীত চোখ হয়ে যায়। যেমনঃ হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘লা বলেনঃ যারা আমার ওলীদের সাথে দুশমনী করবে আমি তার সাথে জেহাদ ঘোষণা করলাম।..... যখন আমি তাঁকে ভালবাসতে শুরু করি তখন আমি তাঁর কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শুনে, আমি তাঁর চোখ হয়ে যাই যা দ্বারা সে দেখে...... (সহি বুখারী, ২য় খন্ড, ৯৬৩ পৃঃ; সহি ইবনে হিব্বান, ১ম জিঃ ২১০ পৃঃ তাফছিরে রুহুল বয়ান, ২য় খন্ড, ৪৪৯ পৃঃ; তাফছিরে কবির শরিফ: ইবনে মাজাহ, ২৯৬পৃঃ (আংশিক); তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১১ তম খন্ড ১৯২ পৃঃ)।
এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, আল্লাহর ওলীগণের চোখ হল স্বয়ং আল্লাহ তা‘লা আর্থাৎ তাঁদের চোখ আল্লাহর মনোনিত চোখ হয়ে যায়, ফলে আল্লাহতা‘লা ঐ চোখে নুর দান করেন। তাই তাঁরা আল্লাহর নুর দ্বারা যা খুশি দেখতে পারে।
দলিলঃ হজরত আনাছ (রাঃ)বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (সাঃ) রাস্তায় অতিক্রমকালে যখন হারেছ (রাঃ) এর সাথে মিলিত হল, তখন নবীজি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার ভোর বেলা কেমন হল হে হারেছ? হারেছ (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! আজকের ভোর বেলা আমার সত্যিকারের ঈমানের সাথে হয়েছে। নবীজি বলেনঃ তুমি লক্ষ্য কর যা তুমি বলছ। কারণ সব হাকিকতেরও হাকিকত রয়েছে, তোমার ঈমানের হাকিকত কি? হারেছ (রাঃ) বলেনঃ আমি যেন আল্লাহর আরশে আল্লাহকে দেখতে পাই, আমি যেন জান্নাতের ভিতরে জান্নাতীদের একে অপরের সাথে কথা বলতে দেখি ও জাহান্নামীদের যন্ত্রনার ছটফট করতে দেখি (তাফছিরে কবির শরিফ, ১ম জিঃ ১২৭ পৃঃ; তাবারানী তাঁর কবিরে; ‘মজমুয়ায়ে জাওয়ায়েদ’-৫৭/১; মুসনাদে বাজ্জার; জামউছ ছাগীর; ফেকহে আকবার; জামেউল মাছানেদউ ওয়াছ ছুনান, ২১তম খন্ড, ৫৯৩১ পৃঃ; মুসনাদে আবী ইয়ালা)।
দলিলঃ হজরত ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, একবার হজরত উমর (রাঃ) একদল সৈন্য অভিযানে প্রেরণ করেন। ‘ছারিয়া’ নামক এক ব্যক্তিকে সেই দলের সেনাপতি নিযুক্ত করেন। একদিন হজরত উমর (রাঃ) মসজিদে নববীতে খুতবা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি খুতবার মাঝখানে খুব উচ্চস্বরে বলে উঠলেন ‘ইয়া ছারিয়া আল জাবাল” এই ঘটনার কয়েকদিন পরে উক্ত সেনাদলের তরফ থেকে একজন বার্তাবাহ মদিনায় আগমন করেন, সে বললঃ হে আমিরুল মু‘মেনীন! আমরা শত্রুদের সম্মুখীন হলে তারা আমাদের পরাস্থ করে। এমন সময় জনৈক ঘোষনাকারীর ‘‘ইয়া ছারিয়া আল জাবাল” উচ্চ শব্দ শুনতে পাই, তখন তখনই আমরা পাহাড়টিকে পশ্চাতে রেখে শত্রুর মোকাবেলা করতে থাকি। অবশেষে আল্লাহতা‘লা তাদেরকে পরাস্থ করেন (বায়হাক্বীর দালায়েলুন্নবুয়াত, ৩৭০/৬; মেসকাত ৫৪৬পৃঃ; মেরকাত, ১১ তম খন্ড, ৯৯পৃঃ; আশিয়াতুল লুমআত; মেরআতুল মানাজিহ)।
এই হাদিস দ্বারা প্রমান হয়, বহু দুরেও যদি কোন কিছু হয়, আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহর নূর দ্বারা তা দেখতে পায়, পাশাপাশি তাঁদের জবানের আওয়াজও বহু দূরে পৌছাতে পারে।
ফকিহ্গণের ভাষ্যঃ
দলিলঃ নিশ্চয় পবিত্র আত্মার অধিকারী যারা ইন্তেকালের পরে তাঁদের রুহ উপরের জগতে মিশে যায়। তখন তাঁদের সামনে কোন পর্দা থাকেনা, ফলে তাঁরা (সৃষ্টি জগতের) সব কিছু দেখতে পায় (মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩য় খন্ড, ১১ পৃঃ)।
সুতরাং ‘নফছে মুতমাইন্নাহ’ স্তরের তথা পবিত্র আত্মার অধিকারী আল্লাহর ওলীগণ ইন্তেকালের পরেও সব কিছু দেখতে পান।
দলিলঃ নিশ্চয় আল্লাহ তাঁদের (ওলীগণের) রুহকে দেহের মত শক্তি দান করেন, ফলে তাঁরা পৃথিবী আসমান ও জান্নাতের যত্র-তত্র যাইতে পারেন (তাফছিরে মাজহারী, ১ম খন্ড, ১৬৯ পৃঃ)।
সুতরাং আল্লাহর বন্ধুগণ ইন্তেকালের পরেও নুরের দেহ দ্বারা সৃষ্টি জগতের যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারেন। ঐ নুরের দেহকে ত্বরিকতের ভাষায় ‘ওজুদ মাহুব লাহু’ বা ‘তেফলুল মায়ানী’ বলা হয়।
দলিলঃ রাসূলে পাক (সাঃ) সাহাবীগণের রুহসমূহ সঙ্গে নিয়ে জগত সমূহে ভ্রমন করেন, এ অবস্থায় অনেক আউলিয়াগণ দেখেছেন (তাফছিরে রুহুল বয়ান, ১০ম খন্ড, ১১৩পৃঃ)।
সুতরাং প্রিয় নবীজি (সাঃ) ও সাহাবীগণ ভূ-মন্ডলে সফর করেন, সাধারণ মানুষ কেউ দেখতে পায়না অথচ আল্লাহর ওলীগণ তা দেখতে পান।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, সাহাবীগণ নবীর উম্মত, অথচ নবীজির সাথে সফর করেন। তাহলে বুঝা যায়, রাসূল (সাঃ)এর উম্মতও সৃষ্ট জগতে সফর করতে পারেন।
তাই বলা যায়, আল্লাহর ওলীগণ জীবদ্দশায় ও ইন্তেকালের পরেও আল্লাহর মনোনিত চোখ হওয়ার কারণে তাঁদের চোখে আল্লাহর নূর বিরাজ করে। ফলে তাঁরা সৃষ্টি জগতের সব কিছু দেখতে পায়।
অনলাইন থেকে ইনকাম করুন বিনা ইনভেষ্টেঃ বিস্তারিত জানুন
পবিত্র কোরআনের আলোকেঃ
মহান আল্লাহতা’লা বলেনঃ “ইন্না ফী যালিকা লা আ-ইয়া-তিল্ লিল্ মুতাওয়াচ্ছেমীন।” নিশ্চয় এতে গভীর দৃষ্টিশীলদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন (সূরা হিজরঃ ৭৫ নং আয়াত)
এই আয়াতে (লিল্মুতাঅস্সিমীন)বলতে আল্লাহর ওলীগণের অন্তরদৃষ্টিকে বুজানো হয়েছে। যেমনঃ
দলিলঃ হজরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন লোক। হজরত মুজাহিদ (রাঃ) বলেন আর্ন্তদৃষ্টি সম্পন্ন লোক (তাফছিরে মায়ালেমু তানজিল, ৩য় খন্ড ২৩৯ পৃঃ; তাফছিরে খাজেন, ৩য় খন্ড ৬০পৃঃ; তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১৪ তম খন্ড ৪২৮ পৃঃ; তাফছিরে তাবারী শরিফ, ১৪ তম খন্ড ৫০ পৃঃ; তাফছিরে কবির, ১৯ তম খন্ড ১৬৮ পৃঃ; তাফছিরে ইবনে আব্বাস ২য় খন্ড তাফছিরে মাজহারী, ৫ম খন্ড ১৭২ পৃঃ; জালালাইন শরিফ, ২১৪ পৃঃ; ইবরে কাছির ,২য় খন্ড ,৬৯২পৃঃ; তাফছিরে দূর্রে মারছুর, ৪র্থ খন্ড , ১৯৪ পৃঃ;)
সুতরাং, এই আয়াতের সহজ অনুবাদ হবেঃ আর্ন্তদৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন।
তাফছিরে রুহুল মায়ানীতে আরোও উল্লেখে আছেঃ বিশিষ্ট সাহাবী হজরত জাফর ইবরে মুহাম্মদ (রাঃ) বলেনঃ (মুতাঅস্সিমীন) হলঃ অন্তরদৃষ্টি সম্পন্ন লোক (রুহুল মায়ানী, ১৪তম খন্ড, ৪২৮পৃঃ)।
এ ব্যাপারে আরোও উল্লেখ আছেঃ হজরত উবাইদ (রঃ)বলেন, এই আয়াতের ব্যাপারে আমি দ্বাহ্হাক (রঃ) কে বলতে শ্তনেছি (লিল মুতাওয়াচ্ছেমীন) হল দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন লোক(তাফছিরে তাবারী শরিফ, ১৪ তম খন্ড ৫৬০পৃঃ তাফছিরে কুরতবী, ১০ম খন্ড ৩৪পৃঃ)।
এ ব্যাপারে আরোও উল্লেখ আছেঃ হজরত আবু উবায়দা (রাঃ) বলেনঃ (লিল মুতাঅস্সিমীন) হলঃ চক্ষুস্মান ব্যক্তি (তাফছিরে কুরতবী, ১০ম খন্ড ৩৪পৃঃ )অন্তরদৃষ্টিকেই বলা হয় চক্ষুস্মান।
সুতরাং, পবিত্র কোরআন আল্লাহর নেক বান্দাগনের অন্তরদৃষ্টি স্বীকার করে। (লিল মুতাঅস্সিমীন গভীর চিন্তাশীল ও অন্তরদৃষ্টি সম্পন্ন লোক, যারা তাঁদের দৃষ্টিশক্তি দ্বারা চিহ্নিত করতে পারে এমনকি নিদর্শন দেখে প্রত্যেক বস্তর হাকিকত জানতে পারে (তাফছিরে আবু ছাউদ, ৪র্থ খন্ড , ৩০৭ পৃঃ; তাফছিরে রুহুর বয়ান, ৪র্থ খন্ড, ৫৮৯ পৃঃ)।
সুতরাং আল্লাহর ওলীগণ অন্তরদৃষ্টি দ্বারা সৃষ্টি জগতের যেকোন অবস্থা দেখতে পায় ও হাকিকতের জ্ঞানী হতে পারেন। হজরত আবু ছাইদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক (ছাল্রাল্লাহু আরায়হি ওয়া ছাল্লাম ) বলেছেনঃ তোমরা মু’মিনের অন্তরদৃষ্টিকে ভয় কর,নিশ্চয় তারা আল্লাহর নুর দিয়ে দেখেন ( জামে তিরমিজি শরিফ ২য় খন্ড ১৪৫ পৃঃ; তাফছিরে কাবির শরিফ, ১ম খন্ড , ১২৭ পৃঃ; ২৩ তম, খন্ড, ১৪৫পৃঃ; তাফছিরে রুহুল বয়ান ১ম খন্ড ৩৯ পৃঃ; ৪র্থ খন্ড ৫৯০ পৃঃ; ২য় খন্ড ৪৫৫ পৃঃ; তাবারানী তাঁর আওছাদে ২য় খন্ড ২৭১ পৃঃ; ও ৬ষ্ঠ খন্ড, ১৯ পৃঃ; (সনদঃ হাছান) তাবারানী তাঁর “ কবিরে ( ১০২/৮) হাঃ ৭৪৯৪;মজমুয়ায়ে জাওয়াহেদ’ (২৭১/১০) ছেররুল আছরার, [কৃতঃহুজুর গাউছে পাক আব্দুল কাদের জিলানী (রাঃ)]১২২ পৃঃ; আলবেদায়া ওয়ান নেহায়া , ২য় খন্ড , ৪০৯ পৃঃ; তাফছিরে কুরতবী, ১০ ম খন্ড , ৩৪ পৃঃ; নাওয়াদেদরুল উছুল, ২৭১ নং হাঃ; থাফছিরে কুরতবী, ১৪ তম খন্ড , ৫০ পৃঃ; রুহুল মায়ানী, ১৪ তম খন্ড , ৪২৯ পৃঃ; তাফছিরে খাজেন, ৩য় খন্ড , ৬০পৃঃ; ইবনে কাছির, ২য় খন্ড ৬৯২ পৃঃ; সাবাছিদুল হাছানাহ, ১৯ পৃঃ; এহইযায়ে উলুমুদ্দিন, ৩য় খন্ড ৩২ পৃঃ; কাশফুল খফা, ১ম খন্ড ,৩৫ পৃঃ)।
এই হাদিস দ্বারা প্রমান হয়, মু‘মিনে কামেল তথা আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহর নূর দিয়ে সব কিছু দেখতে পারেন।
দলিলঃ হযরত ইবনে উমর (রাঃ) বলেন, রাসূলে করিম (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা মু‘মিনের অন্তর দৃষ্টিকে ভয় কর, নিশ্চয় মু‘মিন আল্লাহর নূর দিয়ে দেখেন (তাফছিরে ইবনে কাছির, ২য় খন্ড ৬৯২পৃ; তাফছিরে তাবারী শরিফ, ১৪ তম খন্ড, ৫০পৃঃ,; আবু নুয়াইম তাঁর ‘হুলিয়াতে’ ৯৪/৪; তাফছিরে দূর্রে মানছুর, ৪র্থ খন্ড, ১৯৪ পৃঃ; দ্বায়ফুজ জামে,১২৭)।
এই হাদিসেও মু‘মিনে কামেলের অন্তর দৃষ্টির কথা বলা হয়েছে।
দলিলঃ হজরত ছাউবান (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা মু‘মিনের অন্তর দৃষ্টিকে ভয় কর, নিশ্চয় তাঁরা আল্লাহর নুর দিয়ে দেখেন (তাফছিরে তাবারী শরিফ, ১৪তম খন্ড ৫০পৃঃ; তাফছিরে ইবনে কাছির, ২য় খন্ড, ৬৯২ পৃঃ; তাফছিরে দূর্রে মানছুর, ৪র্থ খন্ড, ১৯৫ পৃঃ; দ্বায়ফুজ জামে, ১৯৬; ঈমাম ছিয়তী (রঃ) এর “জামউছ ছাগীর” ১ম জিঃ ১৬পৃঃ; মাকাছিদুল হাছানা, ১৯ পৃঃ)।
এই হাদিসেও মু‘মিনে কামেল তথা আল্লাহর ওলীগণের অন্তর দৃষ্টিকে সমর্থন করা হয়েছে।
দলিলঃ হযরত আবু উমামা (রাঃ) নবী করিম (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, প্রিয় নবীজি বলেনঃ তোমরা মু‘মিনের অন্তর দৃষ্টিকে ভয় কর, নিশ্চয় তাঁরা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখেন (তাবারানী তাঁর ‘আওছাতে, ২য় খন্ড, ২৭১ পৃঃ; তাবারানী তাঁর মুজামুল কাবিরে ৮/১০২; তাফছিরে কবির শরিফ, ১ম জিঃ ১২৭ পৃঃ; জামউছ ছাগীর, ১ম জিঃ ১৩ পৃঃ)
সর্বোপরি মু‘মিনে কামেল তথা আল্লাহর ওলীগণ অন্তর দৃষ্টি সৃষ্টি জগতের যে কোন কিছু অবলোকন করতে পারে। কারণ তাঁদের চোখে আল্লাহর নূর বিরাজ করে, এবং তাঁদের চোখ আল্লাহর মনোনীত চোখ হয়ে যায়। যেমনঃ হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূলে পাক (সাঃ) বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘লা বলেনঃ যারা আমার ওলীদের সাথে দুশমনী করবে আমি তার সাথে জেহাদ ঘোষণা করলাম।..... যখন আমি তাঁকে ভালবাসতে শুরু করি তখন আমি তাঁর কান হয়ে যাই যা দ্বারা সে শুনে, আমি তাঁর চোখ হয়ে যাই যা দ্বারা সে দেখে...... (সহি বুখারী, ২য় খন্ড, ৯৬৩ পৃঃ; সহি ইবনে হিব্বান, ১ম জিঃ ২১০ পৃঃ তাফছিরে রুহুল বয়ান, ২য় খন্ড, ৪৪৯ পৃঃ; তাফছিরে কবির শরিফ: ইবনে মাজাহ, ২৯৬পৃঃ (আংশিক); তাফছিরে রুহুল মায়ানী, ১১ তম খন্ড ১৯২ পৃঃ)।
এই হাদিস দ্বারা বুঝা যায়, আল্লাহর ওলীগণের চোখ হল স্বয়ং আল্লাহ তা‘লা আর্থাৎ তাঁদের চোখ আল্লাহর মনোনিত চোখ হয়ে যায়, ফলে আল্লাহতা‘লা ঐ চোখে নুর দান করেন। তাই তাঁরা আল্লাহর নুর দ্বারা যা খুশি দেখতে পারে।
দলিলঃ হজরত আনাছ (রাঃ)বর্ণনা করেন, রাসূলে পাক (সাঃ) রাস্তায় অতিক্রমকালে যখন হারেছ (রাঃ) এর সাথে মিলিত হল, তখন নবীজি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, তোমার ভোর বেলা কেমন হল হে হারেছ? হারেছ (রাঃ) বলেনঃ আল্লাহর কসম! আজকের ভোর বেলা আমার সত্যিকারের ঈমানের সাথে হয়েছে। নবীজি বলেনঃ তুমি লক্ষ্য কর যা তুমি বলছ। কারণ সব হাকিকতেরও হাকিকত রয়েছে, তোমার ঈমানের হাকিকত কি? হারেছ (রাঃ) বলেনঃ আমি যেন আল্লাহর আরশে আল্লাহকে দেখতে পাই, আমি যেন জান্নাতের ভিতরে জান্নাতীদের একে অপরের সাথে কথা বলতে দেখি ও জাহান্নামীদের যন্ত্রনার ছটফট করতে দেখি (তাফছিরে কবির শরিফ, ১ম জিঃ ১২৭ পৃঃ; তাবারানী তাঁর কবিরে; ‘মজমুয়ায়ে জাওয়ায়েদ’-৫৭/১; মুসনাদে বাজ্জার; জামউছ ছাগীর; ফেকহে আকবার; জামেউল মাছানেদউ ওয়াছ ছুনান, ২১তম খন্ড, ৫৯৩১ পৃঃ; মুসনাদে আবী ইয়ালা)।
দলিলঃ হজরত ইবনে উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, একবার হজরত উমর (রাঃ) একদল সৈন্য অভিযানে প্রেরণ করেন। ‘ছারিয়া’ নামক এক ব্যক্তিকে সেই দলের সেনাপতি নিযুক্ত করেন। একদিন হজরত উমর (রাঃ) মসজিদে নববীতে খুতবা দিচ্ছিলেন। হঠাৎ তিনি খুতবার মাঝখানে খুব উচ্চস্বরে বলে উঠলেন ‘ইয়া ছারিয়া আল জাবাল” এই ঘটনার কয়েকদিন পরে উক্ত সেনাদলের তরফ থেকে একজন বার্তাবাহ মদিনায় আগমন করেন, সে বললঃ হে আমিরুল মু‘মেনীন! আমরা শত্রুদের সম্মুখীন হলে তারা আমাদের পরাস্থ করে। এমন সময় জনৈক ঘোষনাকারীর ‘‘ইয়া ছারিয়া আল জাবাল” উচ্চ শব্দ শুনতে পাই, তখন তখনই আমরা পাহাড়টিকে পশ্চাতে রেখে শত্রুর মোকাবেলা করতে থাকি। অবশেষে আল্লাহতা‘লা তাদেরকে পরাস্থ করেন (বায়হাক্বীর দালায়েলুন্নবুয়াত, ৩৭০/৬; মেসকাত ৫৪৬পৃঃ; মেরকাত, ১১ তম খন্ড, ৯৯পৃঃ; আশিয়াতুল লুমআত; মেরআতুল মানাজিহ)।
এই হাদিস দ্বারা প্রমান হয়, বহু দুরেও যদি কোন কিছু হয়, আল্লাহর ওলীগণ আল্লাহর নূর দ্বারা তা দেখতে পায়, পাশাপাশি তাঁদের জবানের আওয়াজও বহু দূরে পৌছাতে পারে।
ফকিহ্গণের ভাষ্যঃ
দলিলঃ নিশ্চয় পবিত্র আত্মার অধিকারী যারা ইন্তেকালের পরে তাঁদের রুহ উপরের জগতে মিশে যায়। তখন তাঁদের সামনে কোন পর্দা থাকেনা, ফলে তাঁরা (সৃষ্টি জগতের) সব কিছু দেখতে পায় (মেরকাত শরহে মেসকাত, ৩য় খন্ড, ১১ পৃঃ)।
সুতরাং ‘নফছে মুতমাইন্নাহ’ স্তরের তথা পবিত্র আত্মার অধিকারী আল্লাহর ওলীগণ ইন্তেকালের পরেও সব কিছু দেখতে পান।
দলিলঃ নিশ্চয় আল্লাহ তাঁদের (ওলীগণের) রুহকে দেহের মত শক্তি দান করেন, ফলে তাঁরা পৃথিবী আসমান ও জান্নাতের যত্র-তত্র যাইতে পারেন (তাফছিরে মাজহারী, ১ম খন্ড, ১৬৯ পৃঃ)।
সুতরাং আল্লাহর বন্ধুগণ ইন্তেকালের পরেও নুরের দেহ দ্বারা সৃষ্টি জগতের যেখানে খুশি সেখানে যেতে পারেন। ঐ নুরের দেহকে ত্বরিকতের ভাষায় ‘ওজুদ মাহুব লাহু’ বা ‘তেফলুল মায়ানী’ বলা হয়।
দলিলঃ রাসূলে পাক (সাঃ) সাহাবীগণের রুহসমূহ সঙ্গে নিয়ে জগত সমূহে ভ্রমন করেন, এ অবস্থায় অনেক আউলিয়াগণ দেখেছেন (তাফছিরে রুহুল বয়ান, ১০ম খন্ড, ১১৩পৃঃ)।
সুতরাং প্রিয় নবীজি (সাঃ) ও সাহাবীগণ ভূ-মন্ডলে সফর করেন, সাধারণ মানুষ কেউ দেখতে পায়না অথচ আল্লাহর ওলীগণ তা দেখতে পান।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয় যে, সাহাবীগণ নবীর উম্মত, অথচ নবীজির সাথে সফর করেন। তাহলে বুঝা যায়, রাসূল (সাঃ)এর উম্মতও সৃষ্ট জগতে সফর করতে পারেন।
তাই বলা যায়, আল্লাহর ওলীগণ জীবদ্দশায় ও ইন্তেকালের পরেও আল্লাহর মনোনিত চোখ হওয়ার কারণে তাঁদের চোখে আল্লাহর নূর বিরাজ করে। ফলে তাঁরা সৃষ্টি জগতের সব কিছু দেখতে পায়।
অনলাইন থেকে ইনকাম করুন বিনা ইনভেষ্টেঃ বিস্তারিত জানুন
No comments:
Post a Comment