আয় আহমেদকে বলছি-উরস ফারসি নয়, আরবি শব্দ। যার একটি অর্থ পোস্টে দেওয়া হয়েছে।আর একটি অর্থ আপনি দিয়েছেন।এ প্রসংগে বিশ্বওলী খাজাবাবা ফরিদপুরী(কুঃ) ছাহেব তার নসিহতে আরও বলেন,‘উরস’ আরবী শব্দ। লোগাত বা অভিধানে ইহার নানাবিধ অর্থ পরিলক্ষিত হয়।ওলেমা, বিবাহ বা বিবাহ উপলক্ষে খানা-পিনা, ফূলশয্যার বাসর যাপন ইত্যাদি উরস শব্দের আভিধানিক অর্থ। লোগাত সাঈদী, লোগাত ফেরোজী বা মেছবাহুল লোগাতে উল্লিখিত অর্থ দেখা যায়। ইহা ছাড়াও উরস শব্দের আরও দুইটি বিশেষ অর্থ পরিলক্ষিত হয়। যথাঃ
মিলন,
ওলী-আল্লাহগণের বা পীরে কামেলগণের মৃতুবার্ষিকীতে তাঁহাদের পবিত্র রূহে ছওয়াব রেছানীর উদ্দেশ্যে উদ্যাপিত ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
ডঃ শেখ গোলাম মাক্ছুদ সম্পাদিত ‘‘Perso Arabic elements in Bengali” গ্রন্থে উরস শব্দের নিম্নলিখিত দুইটি অর্থ দেখা যায়ঃ- Anniversary in memory of a saint-যাহার অর্থ দাঁড়ায়ঃ কোন খোদাতত্ত্বজ্ঞ সাধকের মৃত্যুবার্ষিকী উৎযাপন অথবা সাধকের স্মরণে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি। ডঃ এনামুল হক সম্পাদিত এবং বাংলা একাডেমী কর্তৃক প্রকাশিত ব্যবহারিক বাংলা অভিধানে উরস শব্দের অর্থ লেখা আছেঃ ওলী দরবেশের বেছালতে তাঁহাদের সমাধিস্থলে পবিত্র অনুষ্ঠান বিশেষ।
উরস শব্দের মূল ভাষাগত বা ব্যুতপত্তিগত অর্থ মিলন। ওলী-আল্লাহসকল বা খোদাতত্ত্বজ্ঞ সাধকবর্গ ইন্তেকালের সাথে সাথে খোদাতায়ালার সান্নিধ্যে চলিয়া যান, খোদাতায়ালার সহিত মিলিত হন। এই মিলন হয় মাশুকের সহিত আশেকের, বিশ্ব আত্মার সহিত পুণ্যাত্মার। এই মিলন বড় আনন্দময়। আর মৃত্যুই এই মহামিলনে সহায়তা করে বিধায় রাসূলে পাক (সাঃ) বলিয়াছেন, ‘‘মৃত্যু একটি সেতু যাহা বন্ধুর সাথে বন্ধুর মিলন ঘটায়।” এই আনন্দময় আধ্যাত্মিক মহামিলন নবী (আঃ) গণ ও নায়েবে নবী তথা ওলী-আল্লাহগণের ভাগ্যেই ঘটে। কারণ তাহারা বন্ধুত্বের মর্যাদা প্রাপ্ত। তাহারা নাফসে আম্মারার সাথে জেহাদ করিয়া তথা জেহাদে আকবরে নাফসকে পর্যুদস্ত করিয়া, দুনিয়ার দাসত্ব মুক্ত হইয়া, দৈহিক আকর্ষণ ছিন্ন করিয়া, দুনিয়ায় অবস্থান কালেই খোদাতায়ালার সান্নিধ্যে পৌঁছান, খোদাতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জন করেন এবং তদীয় বন্ধুত্বের আসনে আসীন হন। তাই ইন্তেকালের অব্যবহিত পরেই তাহারা খোদাতায়ালার সহিত বা বিশ্ব আত্মার সহিত মিলিত হওয়ার সৌভাগ্যে সৌভাগ্যশালী হন। ইহা পরম আনন্দঘন এক আধ্যাত্মিক মিলন।
যে দিবসে সাধকের পুণ্যাত্মা বিশ্ব আত্মার সহিত মিলিত হয়, সেই দিবসে তাঁহার পবিত্র রূহে ছওয়াব রেছানীর উদ্দেশ্যে যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি উদযাপন করা হয়-তাহা ‘‘উরস” নামে খ্যাত।
No comments:
Post a Comment